ভারতের পাহাড় প্রমাণ রানের সামনে বালির বাঁধের মতো ইংল্যান্ড ব্যাটিং অর্ডার ভেঙে পড়বে কি না এই প্রশ্নটাই ঘোরাফেরা করছে দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষে। এজবাস্টনে ইতিহাস গড়তে ভারতের চাই আর সাতটা উইকেট। চতুর্থ দিনেই দুটো স্বপ্নের ডেলিভারিতে আকাশদীপ নিয়েছেন বেন ডাকেট আর জো রুটের উইকেট। ২৫ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন বেন ডাকেট আর জো রুট ৬ রানে। অন্য প্রান্ত থেকে আগুন ঝরাচ্ছেন মহম্মদ সিরাজ। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথমেই জ্যাক ক্রলিকে শূন্য রানে প্যাভিলিয়নের রাস্তা দেখিয়েছেন তিনি–ই। এককথায় জশপ্রীত বুমরাহর অভাব বুঝতেই দিচ্ছেন না আকাশদীপ আর মহম্মদ সিরাজ। ভারতীয় পেসের এই জোড়া ফলায় চতুর্থ দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান ৩ উইকেটে ৭২। এখনও ৫৩৬ রানে পিছিয়ে তারা। রবিবারে ম্যাচের শেষ দিনে বড় পরীক্ষা ভারতীয় বোলারদের।তিন উইকেট তুলে নিয়ে ইংল্যান্ডের ওপর যে চাপ তৈরি করেছেন আকাশদীপ আর সিরাজ এবার তা ধরে রাখাটাই হল ভারতীয় বোলারদের প্রধান দায়িত্ব।
চতুর্থ দিনের ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করে আউট হন কে এল রাহুলও। তবে করুণ নায়ার ফের ব্যর্থ হন ব্যাট হাতে। এরপর স্কোরবোর্ডের হাল ধরেন ঋষভ পন্থ এবং অধিনায়ক শুভমান গিল। পন্থ ৫৮ বলে করেন ৬৫ রান। ১৬২ বলে দুরন্ত ১৬১ রানের ইনিংস খেললেন ভারত অধিনায়ক। প্রথম ইনিংসে তিনশো রান মাঠে ফেলে এসেছিলেন বলে যোগরাজ সিংয়ের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটার বলেছিলেন, ক্রাইম করেছে। এদিন গিলকে ফের দেখা গেল ইংল্যান্ডের বোলারদের শাসন করতে। সঙ্গী রবীন্দ্র জাদেজাও (৬৯) যোগ্য সঙ্গত দেন তাঁকে।গিল মহাকাব্য শেষমেশ থামল ১৬১ রানে। ৬০০ রানের লিড পার হতেই সবার মনে যখন একটাই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে কখন ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করবে ভারত, ঠিক সেই সময়েই গিল ডেকে নিলেন তাঁর সেনানীদের। ৪২৭ রানে ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা টিম ইন্ডিয়ার। ইংল্যান্ডের সামনে টার্গেট ৬০৮ রান। হেডিংলি টেস্টে শেষ দিনে করতে হতো সাড়ে তিনশো রান। সেই রান তুলে নিয়ে টেস্ট জিতে যায় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় টেস্টের পরিণতি যাতে সেদিকে না যায়, সেই কারণে রানের পাহাড় গড়ল ভারত। ইনিংস ডিক্লেয়ার করতেও সময় নিলেন গিল। ইংল্যান্ডের হাতে দিলেন কম সময়। সেই সঙ্গে রানের পরিমাণও দিলেন বহু বাড়িয়ে।
এদিকে চলতি সিরিজে সেই ‘মিডাস রাজা‘র কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন ভারতের অধিনায়ক শুভমান গিল। যা ধরছেন তাতেই সোনা ফলাচ্ছেন। টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই দুরন্ত ফর্মে শুভমান। ব্যাটে এখন রানের বর্ষণ। ইংল্যান্ড সফরে সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে চলেছেন গিল। এজবাস্টনের প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করে ইতিহাস লিখেছিলেন। এবার দ্বিতীয় ইনিংসেও দুর্দান্ত শতরান করলেন ভারত অধিনায়ক। সেই সঙ্গে ৫৪ বছরের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটালেন ভারত অধিনায়ক। পাশাপাশি, তিনি ভারতের দ্বিতীয় এবং বিশ্বের নবম ব্যাটার হিসেবে এক টেস্ট ম্যাচে দ্বিশতরান এবং শতরান করার গড়লেন নজির।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে, এমন ঘটনা মাত্র দ্বিতীয় বার ঘটল। ৫৪ বছর আগে ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১২৪ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২২০ রান করেছিলেন ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটার সুনীল গাভাসকর। সেই সময় গাভাসকর ছিলেন বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান, যিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। তবে গিলের এই কৃতিত্বও আরও বিশেষ, কারণ তিনি একজন অধিনায়ক হিসেবে এমন কৃতিত্ব অর্জন করলেন। এই তালিকায় রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ডুগ ওয়াল্টার্স, সুনীল গাভাসকর, লরেন্স রো, গ্রেগ চ্যাপেল, গ্রাহাম গুচ, ব্রায়ান লারা, কুমার সঙ্গকারা, মারনাস লাবুশেনের মতো তারকারা। নবতম সংযোজন ভারত অধিনায়ক শুভমান গিল। পাশাপাশি একাধিক নজির গড়লেন ভারতের তরুণ এই অধিনায়ক। যেমন, শুভমান গিল এই সিরিজে এখনও পর্যন্ত ৫০০–এরও বেশি রান করেছেন। যে কারণে তিনি ভারত অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্ট সিরিজে সর্বাধিক রান করার রেকর্ডও করে ফেলেছেন। এর আগে, বিরাট কোহলি অধিনায়ক হিসেবে তাঁর প্রথম টেস্ট সিরিজে ৪৪৯ রান করেছিলেন। এর পাশাপাশি শুভমান গিল সেনা দেশের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে ৩০০–এর বেশি রান করা তৃতীয় ভারতীয় হয়ে উঠলেন। একই সঙ্গে, গিল এশিয়ার প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ইংল্যান্ডে টেস্ট ম্যাচে ৩০০ রানের মাইলফলকও স্পর্শ করলেন। এছাড়া এই ম্যাচের উভয় ইনিংসে শুভমান গিল ৩৫০–এরও বেশি রান করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি ভারতের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে এত রান করলেন। এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল সুনীল গাভাকরের নামে। ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে তিনি ৩৪৪ রান করেছিলেন।
ক্রিকেট বোদ্ধারা বলছেন শুভমান যুগ শুরু হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটে। আর এটা বলতেও কোনও বাধা নেই ইংল্যান্ড সফর এক ঝটকায় বদলে দিল শুভমান গিলকে।