পড়ুয়াদের অনশন তোলার আবেদন জানাতে চান ইন্দ্রানুজের বাবা

শনিবার বিকেলে ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভার মধ্যেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই। অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। উত্তেজনা চলাকালীন মন্ত্রীর গাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে জখম হন ইন্দ্রানুজ রায়। চিকিৎসাধীন কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এই ঘটনার প্রতিবাদে অনশনে বাম ছাত্ররা। শিক্ষামন্ত্রী ব্রত্য বসুর পদত্যাগের দাবি জানিয়ে হচ্ছে আন্দোলন। যা শুনে রীতিমতো মর্মাহত ইন্দ্রানুজের বাবা অমিত রায়। তিনি পড়ুয়াদের অনশন তোলার আবেদন করবেন বলে জানান বুধবার।

এদিকে কেপিসি হাসপাতাল সূত্রে খবর, ইন্দ্রানুজ-অভিনবরা বর্তমানে স্থিতিশীল কিন্তু তাঁদের চোট রয়েছে। মেডিক্যাল রিপোর্টস তাই বলছে। ইন্দ্রানুজের এক্স-রে চোটেরই প্রমাণ। কিন্তু শাসক দল তৃণমূলের একাংশ এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে ছাড়েনি। তৃণমূলের আইটি সেলের প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্যকে এমনও বলতে শোনা যায়, চোখের ওপর থেকে টায়ার চলে গেলে, মাথা থেঁতো হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু, শুধু চোখে চোট লেগেছে। এনিয়ে প্রতিক্রিয়া দেন ইন্দ্রানুজের বাবা অমিত রায়। সঙ্গে এও জানান, এক্স-রে রিপোর্ট মঙ্গলবার পাওয়া গিয়েছে, বিকেল নাগাদ। তবে, কোনও রাজনৈতিক তরজায় যেতে চান না বলে এদিন সাফ জানিয়ে দেন অমিত রায়। তাই তাঁরা যে বিভিন্ন রকম মন্তব্য এড়িয়ে যাচ্ছেন, উপেক্ষা করার চেষ্টা করছেন সেটা বলেন। তাঁর কথায়, ‘যা ঘটছে তা তো দেখতেই পাচ্ছেন। আমাকে আর আলাদা করে বলতে হবে না।’

এদিকে ইন্দ্রানুজের বিরুদ্ধে তিনটি জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তার মধ্যে একটিতে অভিযোগ করা হয়েছে, এই ছাত্র-সহ আরও একাধিক পড়ুয়া ব্রাত্য বসুকে মারধর, মন্ত্রীর পথ আটকানো, ঘড়ি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। প্রতিবাদ করলে মহিলা শিক্ষকদের শ্লীলতাহানি করেছেন। এখানেই শেষ নয়, স্টাফ কোয়ার্টার ভাঙচুর ও আগুন জ্বালানোর অভিযোগ রয়েছে ইন্দ্রানুজের বিরুদ্ধে। এছাড়াও তিন হাজার টাকা, ঘড়ি ও সোনার চেন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই সবটা নস্যাৎ করে দেন অমিত রায়। স্পষ্ট জানান, ‘ইন্দ্রানুজ ও তাঁর বন্ধুদের ওপর অভিযোগ মিথ্যে। একটা শিক্ষা কোনও একটা ঘটনাক্রমে এমন হয়েছে, কিন্তু মিথ্যা অভিযোগ, দমন-পীড়ন ভাল না। ছাত্র-ছাত্রীদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসাতে হবে, এমন নিচু মানের রাজনীতির আমি নিন্দা করছি। এটা শিক্ষাঙ্গনে একদমই চাইছি না।’

এতকিছুর মধ্যেও ইন্দ্রানুজের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে মঙ্গলবার সকালে অমিত রায়কে ফোন করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর কাছে গোটা ঘটনা ও মামলার বিষয়টি জানান তিনি। ‘মিথ্যে অভিযোগ’ প্রসঙ্গে হস্তক্ষেপ করার আবেদনও জানান। তবে, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর অ্যাপ্রোচ যে সম্মানের ও ইতিবাচক, সে বিষয়টি উল্লেখ করতে ভোলেননি তিনি। তবে, ইন্দ্রানুজের বাবার দাবি, এই বিষয়টিও কোথাও কোথাও বিকৃত করা হচ্ছে। ‘শিক্ষামন্ত্রী সত্যিই অনুতপ্ত।’

এরপর অনশন প্রসঙ্গে  শুনে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি তো অনশনের খবরটা জানতাম না, আপনাদের থেকে জানলাম। তাহলে আমি যাব। পড়ুয়াদের এমন ঘটনায় আমি ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছি। ওরা না খেয়ে বসে আছে, আর আমরা চুপচাপ যে যার মতো থাকব, এটা কোনও সুস্থ সমাজের লক্ষণ নয়। আমার নৈতিক জায়গা থেকে মনে হয়েছে, আমি যাব। অনশন তোলার অনুরোধ জানাব।’ শেষে উপাচার্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। উনি দ্রুত ক্যাম্পাসে আসুন। ক্যাম্পাসের সমস্যাগুলো দেখুন।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × five =