ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত হতে চলেছে আরও একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এবং অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যাডভান্স স্টেলথ ফ্রিগেট। শত্রুপক্ষের র্যাডারকে ফাঁকি দিয়ে পাল্টা আঘাত করতে এই অত্যাধুনিক ক্ষমতা সম্পন্ন ফ্রিগেটের জুড়ি মেলা ভার। খাতায় কলমে এই ফ্রিগেটের নাম দেওয়া হয়েছে আইএনএস বিন্ধ্যাগিরি। এরই জেরে শক্তি বৃদ্ধি হল ভারতীয় সেনার। নীলগিরি গোত্রের পি-১৭এ এই ফ্রিগেটটির নাম রাখা হয়েছে আইএনএস বিন্ধ্যাগিরি। তৈরি করেছে গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (জিআরএসই)। সঙ্গে ভারতীয় নৌ-সেনা সূত্রে খবর, পি-১৭এ ক্লাসের শেষতম ফ্রিগেট এটি।
এদিন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাতেই যাত্রা শুরু হল আইএনএস বিন্ধ্যাগিরির। এদিন রাষ্ট্রপতি এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জানান, ‘ভারতীয় জল সীমা সুরক্ষায় নৌবাহিনী ভূমিকা অপরিসীম। আত্মনির্ভর ভারত তৈরি করার ব্যাপারে দেশ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির দেশ হওয়ায় ভারতবর্ষ নিজের দেশকে সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে সবদিক থেকে সক্ষম।‘
এদিন গার্ডেনরিচে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল পি হরি কুমার, রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস সহ জিআরএসই এবং নৌবাহিনীর শীর্ষকর্তারা।
এদিকে এদিন ভারতের নৌবাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট সাতটি এই পি ১৭ এ প্রকল্পের ফ্রিগেট তৈরি করার জন্য বরাত পায় মাঝগাঁও ডক ইয়ার্ড (এমডিএল) এবং গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (জিআরএসই)। গত তিন বছরে জিআরএসই দু’টি ফ্রিগেট তৈরি করে নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। শেষতম ফ্রিগেটটি এদিন জলে নামল। অন্যদিকে, এমডিএল এর শেষতম এই গোত্রের ফ্রিগেটটি আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জলে নামানো হবে বলে জানান ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল পি হরি কুমার।
এদিনের এই ফ্রিগেট সম্পর্কে বলতে গিয়ে নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল পি হরি কুমার এও জানান, ‘কমব্যাট প্ল্যাটফর্মের দিক থেকে এই ধরনের জাহাজ নৌবাহিনীর হাতে আসায় মেরিটাইম সিকিউরিটি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। আমাদের জন্য আজ এটা খুব গর্বের দিন। এই ফ্রিগেট যে শুধু অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি তাই নয়, অস্ত্রও সজ্জিত রয়েছে অত্যন্ত আধুনিক মানের। আমাদের মেরিটাইম ক্যাপাবিলিটি পরিকল্পনা তৈরি করা রয়েছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে আমাদের দেশের মেরিটাইম ক্যাপাবিলিটি অনেক বেশি আপগ্রেড হয়ে যাবে। আরও বেশি করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন হয়ে উঠবে। বর্তমানে এখন যে পরিমাণ যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করা হয়, আগামী দিন সেই সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যাবে। যুদ্ধ জাহাজের সংখ্যা এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির হিসাবে নৌবাহিনী সবার উপরে উঠে আসবে।’ একইসঙ্গে তাঁর দাবি, এই ধরনের ফ্লিট সাপোর্ট জাহাজগুলির পরিষেবার ব্যাপ্তি অনেক বড়। এগুলি মূলত জ্বালানি সরবরাহ, খাদ্যপণ্য সরবরাহ, তথ্যপ্রযুক্তির ক্যাপাবিলিটি বৃদ্ধি করা সহ একাধিক কাজ করা হয়। এর ফলে নৌবাহিনীর লজিস্টিক এবং অন্যান্য পরিষেবা দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তিনি। এরই পাশাপাশি ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্তাদের কথায়, এই রণতরী সমুদ্রের অন্দরে গিয়ে ‘আড়াল’ খুঁজে নিতে পারে। পাশাপাশিই শত্রুপক্ষের র্যাডারের নজরদারিকে ফাঁকি দিয়ে হামলা চালাতে পারে দ্রুত। শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হেনে ধ্বংস করতে পারে শত্রুর জলযান বা আস্ত বন্দর।