আলু অমিল হতে চলেছে কলকাতা তথা বঙ্গের বহু বাজারে। কারণ, প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ীদের ডাকা কর্মবিরতির জের সোমবার সকাল থেকে আলু বের হচ্ছে না হিমঘর থেকে। আর এই প্রেক্ষিতেই ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বাজারে সোমবার থেকেই জোগান কমবে আলুর। হিমঘর থেকে শনিবার যে আলু বের করা হয়েছিল তা বাজারে প্রায় শেষের দিকে। অর্থাৎ সোমবার থেকেই বেশির ভাগ বাজারে দেখা মিলবে না আলু। অতঃপর যেটুকু আলু মজুত করা রয়েছে, তার মূল্য হবে আগুনছোঁয়া। রাজ্যে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন আলুর প্রয়োজন পড়ে খাওয়ার জন্য। কিন্তু সোমবার থেকে হিমঘর থেকে আলু বেরনোই বন্ধ হয়ে পড়ছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে আলু নিয়ে দেখা দেবে এক তীব্র সঙ্কট। সোমবারই কলকাতার বাজারগুলোতে জ্যোতি আলুর দাম ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা চন্দ্রমুখী ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। জেলাগুলিতেও প্রায় একই ছবি।
এমন এক অবস্থা তৈরি হওয়ার পিছনে রয়েছে হিমঘর অ্যাসোসিয়েশন ও রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি এক সিদ্ধান্ত। জানা গিয়েছে, বাজারে ইতিমধ্যেই আলুর দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে, কখনও বাজারে টাস্কফোর্সের অভিযান, কখনও আবার হিমঘরে আধিকারিকদের হানা। আরও অভিযোগ, একাধিক বর্ডারে আলুর গাড়িকে পুলিশের পক্ষ থেকে আটকে দেওয়া হচ্ছে আর যার ফলে গাড়িতেই নষ্ট হচ্ছে আলু। ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে প্রশাসনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও এনিয়ে কোন সুরাহা মেলেনি বলে অভিযোগ তুলছেন প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির পদাধিকারীরা।
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির পদাধিকারীদের দাবি, ভিন রাজ্য আলু যাতে না যায়, তার জন্য বর্ডারে রীতিমতো পুলিশি জুলুমবাজি চলে। বর্ডারে দিনের পর দিন গাড়ি দাঁড়িয়ে থেকে আলু নষ্ট হয়। চলতি সময়ে বাজারে আলুর দাম বৃদ্ধির জেরে আলু ব্যবসায়ী ও সমিতির তরফে এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন বাজারে ন্যায্যমূল্যের আলু বিক্রয় কেন্দ্র খুলে সাধারণ মানুষকে কম দামে আলু বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার আলু ব্যবসায়ীদের কথা ভাবছে না বলে পাল্টা অভিযোগ।
এরফলে মঙ্গলবার থেকেই বাজারে দেখা দিতে পারে আলুর সঙ্কট। সমস্যায় ক্রেতারা। এই প্রসঙ্গে ক্রেতারা জানাচ্ছেন, ‘বাজারে বেরোলে মাথা হাত পড়ছে দাম শুনে। মুখে রাজনৈতিক নেতৃত্বরা যে কথা বলছেন, তার কিন্তু কোনও প্রতিফলন বাজারে বেরোলে দেখা যায় না। আগের যা পরিস্থিতি, তাই রয়েছে। নির্দেশ দেওয়া, কার্যকারী হওয়া, তার মধ্যেই বিস্তর ফারাক। আগে কিছু না হলে মানুষ বলত আলুসেদ্ধ ভাত খাব, কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতিটাও আর নেই।’
এদিকে এক আলু ব্যবসায়ী জানন, ‘ এই বনধে কিন্তু ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতি। আলু তো স্টকে থেকে যাবে। আলু বেরিয়ে গেলেই ভালো। কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, যে বনধ ডাকতে বাধ্য হয়েছে।’
এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী বেচারাম মান্না জানান, ‘আলুর দাম হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়েছে। আমরা সকলকেই অনুরোধ করেছি, যাতে একবারে না বাড়ে। দেখা যাচ্ছে, সরকারি নির্দেশিকা দিয়েছি। তাঁদের কর্মবিরতি নিয়ে নিশ্চয়ই আলোচনা করে একটা রাস্তা বেরোবে।’