যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল থেকে পড়ে মৃত্যু হল প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডু। বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। ইতিমধ্যেই যাদবপুর থানা অস্বাভাবিক মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তবে স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। মৃত্যুর কারণ নিয়ে তৈরি হয়েছে যথেষ্ট ধোঁয়াশা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন পড়ুয়াদের দাবি,এটি একটি র‍্যাগিংয়ের ঘটনা এবং এই অভিযোগ সম্পর্কে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ অবগত। একইসঙ্গে তাঁরা এও জানান,লিখিত কোনও অভিযোগ এলে অ্যান্টি র‌্যাগিং স্কোয়্যাড এবং অ্যান্টি র‌্যাগিং সেল এই বিষয়ে তদন্ত করবে।
পুলিশ সূত্রে খবর, স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর বাড়ি নদিয়ার বগুলায়। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বাংলা নিয়ে স্নাতক স্তরে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বুধবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের ছাদ থেকে পড়ে যান নদিয়ার বগুলার বাসিন্দা স্বপ্নদীপ। গুরুতর আহত অবস্থায় এরপরই দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী বেসরকারি একটি হাসপাতালে। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে এসএসকেএম-এ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হলে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ দ্বিতীয়বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এরপরই মৃত্যু হয় তাঁর। ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসেছেন মৃত পড়ুয়ার বাবা ও তাঁর আত্মীয়রা।
ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ আধিকারিকরা। স্বপ্নদীপের বাবার সঙ্গেও কর্তৃপক্ষের কথা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এই বিষয়ে,যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য বলেন,’খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। যদি র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে আমরা কড়া পদক্ষেপ করব। পুলিশও তদন্ত শুরু করেছে।’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া জানান, ‘আমরা শুনেছি ওকে অসংবেদনশীল কিছু মন্তব্য করা হয়েছে। তবে কী কথা হয়েছিল তা স্বচ্ছভাবে অবগত নই। কিন্তু আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি।’
এদিকে প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুতে তোলপাড় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একদিন ক্লাস করার পরই কী এমন ঘটল? স্বপ্নদীপ কি নিজেই মৃত্যুর পথ বেছে নিলেন? নাকি প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর পিছনে ছিল কারও হাত? পুলিশি তদন্তের পর এই সব প্রশ্নের উত্তর কিছুটা স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সামনে এলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। মৃত্যুর আগে মা-কে ফোন করেছিলেন স্বপ্নদীপ কুণ্ডু। কিছু কথাও বলতে চেয়েছিলেন তিনি।
স্বপ্নদীপের মামা অরূপ কুণ্ডু জানান,মৃত্যুর আগে মা-কে ফোন করেছিলেন ওই ছাত্র। বলেছিলেন, ‘আমি ভাল নেই মা। আমার খুব ভয় করছে। তুমি এসো, তোমার সঙ্গে অনেক কথা আছে।’ রাত সাড়ে ৯ টা নাগাদ এই কথা হয়েছিল। তারপর ফোন করলেও স্বপ্নদীপ আর ফোন ধরেননি বলেই দাবি তাঁর মামার। ঘণ্টাখানেক পর হস্টেল থেকে ফোন যায় বাড়িতে। জানানো হয়, ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছেন স্বপ্নদীপ। সেই কারণেই আত্মহত্যার তত্ত্ব মানতে নারাজ ছাত্রের পরিবার। স্বপ্নদীপের মামা বলছেন,’আমাদের সন্দেহ তো হচ্ছেই। ও সুইসাইড কেন করবে? যে মায়ের সঙ্গে কথা বলল, সে কীভাবে কিছুক্ষণের মধ্যে সুইসাইড করতে পারে? পাগল তো নয়।’ এই প্রসঙ্গেই অরূপবাবুর দাবি,বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নিয়ে কোনও অসুবিধা ছিল না স্বপ্নদীপের। বাবাকে ফোন করে নাকি ওই ছাত্র জানিয়েছিলেন যে ক্লাস করে তিনি খুশি। র‌্যাগিং না হলে এমনটা ঘটত না বলেই মনে করছেন অরূপবাবু।
তদন্ত চেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে চিঠি লিখেছেন পড়ুয়ার মামা। ছাত্র সংগঠন এসএফআই ও ডিএসও-র তরফেও র‌্যাগিং-এর অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদের দাবি,বারবার র‌্যাগিং-এর অভিযোগ উঠলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। হস্টেল সুপার থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সব বাম ছাত্র সংগঠন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − nine =