মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুষ্টু লোক’ মন্তব্যের পালটা দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘কে দুষ্টু লোক। সবচেয়ে বড় দুষ্টু লোকের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ প্রসঙ্গত, সোমবার সন্দেশখালির সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানকার মহিলাদের সতর্ক করে ‘দুষ্টু’ লোকের খপ্পরে না পড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন । একদিনের মাথায় সেই সন্দেশখালির মাটিতে দাঁড়িয়েই তাঁর পালটা কটাক্ষ করলেন শুভেন্দু অধিকারী। এই বিষয়ে বলতে গিয়ে সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহান ও তাঁর বাহিনীর অত্যাচারের প্রসঙ্গও টেনে আনেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক।
এদিকে মঙ্গলবারের শুভেন্দুর এই সভার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। বিনা অনুমতিতেই সভা করেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। ফেরিঘাট থেকে হেঁটেই মঞ্চে পৌঁছলেন বিজেপি নেতা। মঞ্চে ওঠার আগেই শুভেন্দু বলেন, তিনি সন্দেশখালির কুটুম তাই তাঁকে এভাবে স্বাগত জানানো হচ্ছে। আর তৃণমূলের যে সকল নেতারা এসেছিলেন তাঁরা বেনিফিসিয়ারি।
এরপর মঙ্গলবার সন্দেশখালিতে সভা মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী আপনি শাহজাহান ও তাঁর বাহিনীর অত্যাচারের কথা ভুলে যেতে বলেছেন সন্দেশখালির মহিলাদের । ওটা ভুলবে না কেউই । সন্দেশখালির মা-বোনেরা ভুলবে না । আমিও তো ভুলবই না । বিঘার পর বিঘা জমি জরবদখল করে জলকর বানিয়ে রেখেছিল শাহজাহান, শিবু হাজরা’রা। ১০০দিনের কাজের টাকা হোক কিংবা আবাসের টাকা। সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন বঞ্চিত করে সেই টাকা লুট করেছে শেখ শাহজাহান ও তার দলবল। এত মানুষ অত্যাচারিত। তারপরেও মুখ্যমন্ত্রী এসব কথা ভুলে যেতে বলেছেন। কখনওই তা ভুলে যাবে না সন্দেশখালির মানুষ ।’
বিজেপি এ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে সন্দেশখালি-কাণ্ডে কমিশন গঠন করবে বলেও এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হুঁশিয়ারি দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে কমিশন গঠন তো করবেই, তার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আপনাকেও জেলে যেতে হবে। সন্দেশখালির বাসিন্দাদের আপনি মিথ্যা অভিযোগে জেলে পুড়েছেন। সেই বদলা আমরা সুদে আসলে নেব। সেদিন আর বেশি দূরে নেই । আর মাত্র ১৫ মাস। তারপর আপনাকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হতে হবে।’ এরই রেশ ধরে এও জানান, ‘নন্দীগ্রামে আমি জিতেছি। আমার ভাইকে জিতিয়েছি কাঁথিতে। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে তমলুকে জিতিয়েছি। সন্দেশ খালি যে পথ দেখিয়েছে, আগামী দিন পশ্চিমবঙ্গ সেই পথে হাঁটবে।’ সঙ্গে এ হুঁশিয়ারিও দেন,’ বদলা নেব। আইন মেনে বদলা নেব। আমায় হারাতে গেছিল কলকাতা থেকে। আমি হারিয়ে পাঠিয়েছি। এবার আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। উনি ধার করে টাকা দিচ্ছেন না। চাকরি নেই। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ১০০০ টাকা। আপনি জেনে রাখুন এক কোটি টাকা দিলেও কোনও হিন্দু ভোট দেবে না।’
এদিন সন্দেশখালির বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে এদিন শুভেন্দু বলেন, ‘এখানকার মানুষের অবস্থা ভাল নয়। বাম আমলে কুড়ি হাজার টাকা করে ঋণ ছিল। এখন ঋণ হয়েছে মাথাপিছু ৫৯ হাজার টাকা করে। এই যে কিছু বাড়িতে ৬০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন সেটাও ভারত সরকারের থেকে ঋণ নিয়ে। সোমবার এমন ভাবে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মনে হবে না, মনে হবে বিরোধী দলনেতা বা ৬ মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। বলছেন রামপুর জেলিয়াখালি করে দেব। আপনাকে করতে হবে না, বিজেপি ক্ষমতায় এলে করে দেবে। এতদিন পরে মনে পড়েছে সন্দেশখালিতে ৫০ বেডকে ১০০ বেড করবে।’ এদিন শুভেন্দু প্রশ্ন তোলেন স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প নিয়েও। এতে কী হয় সে প্রশ্ন সন্দেশখালির বাসিন্দাদের করেন তিনি। সঙ্গে এও জানান, আয়ুষ্মান ভারত চালু করতে দেয়নি। একাধিক ভারত সরকারের স্কিম চালু করতে দেয়নি।
এরই পাশাপাশি শুভেন্দু এও মনে করিয়ে দেন, ‘ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র মামলা করেছে। কারণ, হাজি নুরুলের মনোনয়ন ত্রুটি যুক্ত। কয়েকদিন আগে শুনানি ছিল। রাজ্য সরকার হলফনামা জমা দিতে গিয়েছিল। বিচারপতি হলফনামা বাতিল করে ক্ষমা চাইয়েছে কোর্টে। পরের শুনানি ১৫ই জানুয়ারি। নিশ্চিন্তে থাকুন সাংসদ বিজেপির হবে।’