ইডির উপর হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

সন্দেশখালিতে ইডির উপর হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন এখনও রাজ্যপাল ঘোষণা করছেন না যে, রাজ্যের সাংবিধানিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে? এরই পাশাপাশি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘যদি তদন্তকারীরাই মার খান, তাহলে তদন্ত হবে কী করে?’

এদিন নিয়োগ দুর্নীতির শুনানি চলাকালীন সিবিআইয়ের আইনজীবীকে বিচারপতি এ প্রশ্নও করেন, ‘বন্দুক থাকে না ? চালাতে পারো না? ২ জনকে মেরেছে দুশো জনকে পাঠাও।’ আর এই বক্তব্য থেকে এটাও স্পষ্ট যে, সন্দেশখালিতে স্থানীয় ও তৃণমূলের ভূমিকায় তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট।

প্রসঙ্গত, ইডি অভিযান ঘিরেই এদিন তুলকালাম পরিস্থিতি তৈরি হয় সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায়। শেখ শাহজাহানের বাড়িতে প্রবেশ করতে গেলে বাধার মুখে পড়তে হয় আধিকারিকদের। মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় দুই ইডি আধিকারিকের। কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়িতে চলে ভাঙচুর। বহু লোক এক জায়গায় জড় হয়েছিল, যাদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন মহিলারা। সিআরপিএফ জওয়ানদের পর্যন্ত তোয়াক্কা করেনি ওই সব লোকজন। কার্যত ধাওয়া করে এলাকা ছাড়া করা হয় ইডি আধিকারিক ও জওয়ানদের।

ঘটনার গুরুত্ব এতটাই বেশি যে এরপরই সল্টলেকে সিআরপিএফ-এর অফিস থেকে বাড়তি বাহিনী পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এই বাড়তি বাহিনীতে রয়েছেন ২০ জন জওয়ান। এদিকে মধ্যমগ্রাম থেকেও এক সেকশন বাহিনী আসে। জানা যায়, প্রথমে আক্রান্তদের কাছে পৌঁছবে এই বাহিনী। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সরবেড়িয়া যাবেন কি না।

তবে এই ঘটনার জেরে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থল ছাড়তে হয় তদন্তকারীদের। আহত আধিকারিককে সল্টলেকের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়।এই ঘটনা রাজ্যে কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

সূত্রে এ খবরও মিলছে, এই ঘটনার রিপোর্ট যাচ্ছে দিল্লিতে। ইডি ও সিআরপিএফ উভয়েই এই ঘটনার রিপোর্ট দেবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে কাছে। এদিকে, ঘটনার পর গোটা সন্দেশখালি কার্যত ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সূত্রে এ খবরও মেলে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে এই ঘটনা সম্পর্কিত রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে সিআরপিএফ-এর তরফে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, এই ঘটনা খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে কেন্দ্র। বারবার কেন বাংলায় এমন ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

শুধু সিআরপিএফ নয়, রিপোর্ট দিচ্ছে ইডি-ও। ইতিমধ্যেই তারা জোনাল ডিরেক্টরের কাছে প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করেছে। সিজিও কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয়েছে স্পেশাল ডিরেক্টরও। সূত্রের খবর, আক্রান্ত ইডি আধিকারিকরা হামলার ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাবেন দিল্লির সদর দফতরে। হামলার ঘটনার কথা ইডি আদালতেও জানাবে।

তবে এদিনের ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই যে প্রশ্ন সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে তা হল, ইডি-র নজরে থাকা কে এই শাহজাহান তা নিয়েই। এর আগে শাহজাহান বিভিন্ন কারণে শিরোনামে উঠে এসেছিলেন। জানা যায়, বাম জামানাতেই উত্থান হয় শাহজাহানের। পরে তৃণমূল আমলেও তাঁর প্রতিপত্তি একটুও কমেনি। বরং আরও ফুলে ফেঁপে ওঠে। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। একাধিক অভিযোগ থাকলেও তাঁর গতিবিধিতে লাগাম পরানো সম্ভব হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও ধারে ভারে বেড়েছেন শাহজাহান। এই ঘটনায় কি নয়া কোনও আইনি পদক্ষেপ করা হবে! এখন নজর সেই দিকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 2 =