প্রাথমিক নিয়োগ কেলেঙ্কারির শিকড় খুঁজতে গিয়ে এবার ৩৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির খোঁজ পেল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে মুখবন্ধ খামে একটি রিপোর্ট জমা দেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাতে বলা হয়েছে ১৩ জুলাই কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, অয়ন শীল ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ১৫ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত এবং ৪৩টি স্থাবর সম্পত্তি প্রসিড অব ক্রাইম হিসাবে অ্যাটাচ করা হয়েছে। এরই পাশাপাশি ইডির তরফ থেকে এও দাবি করা হয়েছে যে, প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা বাংলা সিনেমা থেকে স্থাবর সম্পত্তি, অস্থাবর সম্পত্তিতেও বিনিয়োগ করা হয়েছে। এরই সূত্র ধরে সামনে আনা হয় ১২৬ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার সম্পত্তি এবং নগদ, যা অ্যাটাচ করা হয়েছে। বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে এই রিপোর্ট জমা পড়ে শুক্রবার। বিচারপতি অর্ডার দেওয়ার সময় ওই রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে টাকার কথা বলেন।
এই প্রসঙ্গেই বিচারপতি সিনহা এদিন জানতে চান, ‘এত টাকা যদি এই দুর্নীতি থেকে উঠে থাকে, তাহলে আপনারা এখনও এই দুর্নীতির কিংপিন কে, তাকে কেন খুঁজে পাচ্ছেন না?’ এর প্রসঙ্গে মামলাকারী রমেশ মালিকের আইনজীবী আদালতকে জানান, ৪২ হাজার ৯৪৯ জন এখনও চাকরি করছেন যাঁরা নিয়ম মেনে চাকরি পাননি। এরপরই আদালত সিবিআইকে নির্দেশ দেয়, ওই শিক্ষকদের মধ্যে কারা কারা বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছেন তা অবিলম্বে খুঁজে বের করে তালিকা তৈরি করে আদালতে জমা দিক। আর তা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হল দুই তদন্তকারী সংস্থা ইডি এবং সিবিআই উভয়কেই। আর এই রিপোর্ট জমা দিতে হবে আগামী ২৯ অগাস্টের মধ্যে, তাও জানান বিচারপতি সিনহা।
শুধু তাই নয়, পুরনিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে এদিন অসন্তোষ প্রকাশ প্রকাশ করতে দেখা যায় বিচারপতি অমৃতা সিনহাকে। বিচারপতি সিনহা এদিন তদন্তকারী আধিকারিকদের কাছে জানতে চান, কী করে রাজ্যের কাছে নোটিস দিয়ে পুরসভার হিসাব জানতে চাওয়া হয়েছে তা নিয়েও। সঙ্গে এও বলেন, আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই সমস্ত তথ্য ওপেন ফোরামেই পাওয়া যায়। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে বিচাপতি সিনহা এও জানতে চান, এটা কোনও তদন্তের অংশ হতে পারে কি না তা নিয়েও। একইসঙ্গে বিচারপতি এই মামলায় তদন্তকারী ইডি-সিবিআই আধিকারিকের নামের তালিকাও চেয়ে পাঠান। সঙ্গে এও জানান, এরপর সবদিক খতিয়ে দেখে আদালত যদি মনে করে তাহলে শিক্ষা দুর্নীতির তদন্তের মতোই স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট তৈরি করে দিতে পারে। এমনও হতে পারে আদালতের নজরদারি থাকতে পারে মামলার তদন্তে।
প্রসঙ্গত, প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ মামলায় চাকরি পাওয়া ৪২৯৪৯ জন শিক্ষকের একাংশের বিরুদ্ধে ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। আগে এই মামলায় ৩২০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পরে এই মামলার এজলাস বদল হয়। মামলা ওঠে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। বিচারপতি সিনহা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ই বহাল রাখেন। পরে ডিভিশন বেঞ্চও জানায়, সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে নতুন করে হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে এই চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের।