কাবুলিওয়ালার হুমকি, থানায় অভিযোগ না নেওয়ায় মামলা গড়াল আদালতে

থানা না বললেও মামলা গ্রহণ করল আদালত। এই মামলার সূত্রপাত, কাবুলিওয়ালার থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়ার ঘটনায়। লেক গার্ডেন্সের এক বাসিন্দা এক কাবুলিওয়ালার থেকে ঋণ নেওয়ার পর সুদ-সহ আসলের সিংহভাগই মিটিয়ে দেন। বাকি ছিল মাত্র ২৫ হাজার। সেই টাকা আদায় করতে ওই ব্যক্তির স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন এক কাবুলিওয়ালা। কুরুচিকর মন্তব্যও করেন ওই কাবুলিওয়ালা।

প্রাণভয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে থানায় এফআইআর নিতে গড়িমসি করা হয় বলে অভিযোগ। আইপিসি নাকি ভারতীয় ন্যায় সংহিতা আইনে মামলা রুজু হবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যান থানার অফিসারেরা। শুধু লেক গার্ডেন্সের ঘটনাই নয়, শহরে বেশ কয়েকটি থানায় একই রকমের সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি করছেন নাগরিকদের একাংশ। শহরের বিভিন্ন থানাগুলিতে মামলা দায়ের করতে যে সমস্যা হচ্ছে, সেই বার্তা পৌঁছেছে লালবাজারেও।

আইনজ্ঞদের মতে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা আইনে কী কী বদল আনা হয়েছে, নতুন আইনের কোন ধারায় মামলা করলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে, তাতে পুরোপুরি সড়গড় হননি আইন রক্ষকরা। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই পরে অভিযোগ জানাতে বলা হচ্ছে। লেক গার্ডেন্সের ওই ব্যক্তি গত ২৭ তারিখ থেকে থানায় ঘুরছেন। শেষে থানার উপরে ভরসা না রাখতে পেরে সরাসরি আলিপুর আদালতের দ্বারস্থ হন। বিচারক তাঁর আবেদন গ্রহণও করেন।

আদালতে ওই ব্যক্তি জানান, বছর দুই আগে ১০ শতাংশ সুদে ৫ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। তাঁর দাবি, জুনের ২৭ তারিখে ফোন করে কাবুলিওয়ালা জানতে চান, কবে ইন্টারেস্ট দিবি বল, না হলে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যাব। এরপর থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে থানার ডিউটি অফিসারের তা নিতে চাননি। এদিকে গত ৩০ জুন ইন্ডিয়ান পেনাল কোড বাতিল হয়ে যায়। ১ জুলাই থেকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা আইন চালু হয়। অভিযোগকারীর আইনজীবী প্রশান্ত মজুমদার বলেন, ‘এখন থানায় মামলা দায়ের নিয়ে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। পুলিশকর্মী এবং সাধারণ মানুষ আইন নিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। সে কারণে আমার মক্কেল আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।’ আগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৮৫ ধারায় তোলাবাজির অভিযোগ আনা হতো। ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় তা বদলে ৩০৮(৩) ধারা হয়েছে। এ রকম ভাবেই মারধর, হুমকির ধারাগুলিরও পরিবর্তন হয়েছে। এদিন আবেদনপত্রে নতুন ধারাগুলি উল্লেখ করা হয় বলে সূত্রের খবর।

এদিকে সূত্রে খবর, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম আইনের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেতে আইনজ্ঞদের দিয়ে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে লালবাজারের তরফে। থানার অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নতুন আইনে এফআইআর করতে সমস্যা হলে, সিনিয়র অফিসার বা আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − 6 =