বামপন্থী আইনজীবী ও নেতাদের দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে সওয়াল করতে দেখা গেল বর্ষীয়ান আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আদালত অবমাননার মামলায় তিনি পেশ করেন একটি বিস্তারিত হলফনামা, যেখানে ছবিসহ তুলে ধরা হয়েছে একাধিক বিতর্কিত ঘটনার তথ্য ও প্রমাণ।
সোমবার কুণাল ঘোষকে নিয়ে এক মামলার প্রেক্ষিতে এই হলফনামা পেশ করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানে তিনি স্পষ্ট জানান, যে সভা নিয়ে বিতর্ক সেখানে উপস্থিতঃই ছিলেন না কুণাল। এই দাবির প্রেক্ষিতে আদালতে রাখেন প্রমাণও। এর পাশাপাশি তিনি এও দাবি করেন, যাঁদের হয়ে আদালতে সওয়াল করে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন যেমন বিকাশ ভট্টাচার্য, ফিরদৌস শামিম–এর মতো সিপিএম ঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা পরবর্তীকালে সেই চাকরির বিরোধিতায় মামলাকরেছেন।এই অবস্থানকে দ্বিচারিতা বলেও দাবি করেন কল্যাণ।
সঙ্গে এও জানান, কুণাল ঘোষও এই দ্বিচারিতা নিয়েই সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলেছিলেন, যা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে না বলেই দাবি কল্যাণের। পাশাপাশি তাঁর দাবির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কল্যাণ এও জানান, যাঁরা নিয়মিত রাজনৈতিক ভাষণে অংশ নেন, সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন, তাঁদের জবাব দেওয়ার অধিকার একজন দলের মুখপাত্রের থাকা স্বাভাবিক। পাশাাপাশি কল্যাণ এও দাবি করেন, এই মামলা ‘সুয়ো মোটো’ নয়। কারণ এই মামলা এটি এক পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে শুরু হয়েছে, অথচ সেই আবেদন ও আইনি প্রক্রিয়ায় একাধিক ত্রুটি রয়েছে।
এর পাশাপাশি এদিন সওয়ালে সময কল্যাণের মুখে শোনা যায় প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়েরও নাম। এমনকী এদিন তিনি সওয়ালের সময় প্রশ্ন তোলেন একজন বিচারপতি হিসেবে তাঁর আচরণ নিয়েও। কুণালের আদালত অবমাননার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এদিন কল্যাণ বলেন, যেখানে প্রতিদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চোর–ডাকাত বলে আক্রমণ করছে। সেখানে রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র হয়ে কুণালের কী করার আছে তাও এদিন জানতে চান কল্যাণ। একইসঙ্গে এ প্রশ্নও করেন, ‘আইনজীবী যদি রাজনৈতিক কথা বলেন এবং অন্য প্রতিপক্ষ দলের নেতাদের আক্রমণ করেন তাহলে কি তিনি আদালতের রক্ষাকবচ চাইতে পারেন?’ একইসঙ্গে
প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ টেনে এনে কল্যাণ আদালতে প্রশ্ন করেন, ‘একজন প্রাক্তন বিচারপতি সমস্ত বিশ্বাস এবং আস্থা ভেঙেচুরে দিয়েছেন। চেয়ারে বসে বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি বলেছিলেন ‘কান ধরে তুলে নিয়ে আয়’। আর এখানেই আইনজীবী কল্যাণের প্রশ্ন, এটা একজন বিচারপতির আচরণ হতে পারে কী না তা নিয়েও। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী সোমবার। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ, বিচারপতি শম্পা সরকার এবং বিচারপতি শান্তনু মুখোপাধ্যায়ের বিশেষ বেঞ্চ মামলা শুনবে।