সর্বস্তরে সমালোচিত হতেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুর বদল কাঞ্চনের

২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুর বদল উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের। নিজের মন্তব্যের জন্য ৬ মিনিটের ভিডিয়োয় চাইলেন ক্ষমা। বারবার সেখানে কাঞ্চনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি লজ্জিত, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’ ১ সেপ্টেম্বর রবিবার হুগলির কোন্নগর শহর ও নবগ্রাম মহিলা তৃণমূলের উদ্যোগে ধরনা কর্মসূচি ছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কাঞ্চন মল্লিকও।

সেখানেই কাঞ্চন মল্লিক আরজি করকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেন। তবে একইসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্যও করে বসেন। কাঞ্চনকে বলতে শোনা যায়, ‘যাঁরা কর্মবিরতি করছেন শাসকদলের বিরুদ্ধে। ভাল। তাঁরা সরকারি বেতন নিচ্ছেন তো নাকি নিচ্ছেন না? এটা আমার প্রশ্ন। বোনাস নেবেন তো? না নেবেন না? এটা আমার প্রশ্ন।’

এরপর কাঞ্চনের এই বক্তব্য আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে সমাজের সর্বস্তরে। সাধারণ মানুষ থেকে চিকিৎসক, রাজনীতিক কিংবা চলচ্চিত্র জগতের বন্ধুরা, তীব্র নিন্দায় সরব হন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম মুখ খোলেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। লেখেন, ‘অনুপ্রেরণার লকারে চোখ, কান, মাথা, মনুষ্যত্ব, বুদ্ধি-বিবেচনা, সব ঢুকিয়ে রেখে চাবিটা হারিয়ে ফেলেছিস। খুঁজে ফেলে খবর দিস।’

এরপর একে একে কাঞ্চনকে বাক্য়বাণে বিদ্ধ করতে থাকেন রুদ্রনীল ঘোষ, সুজন মুখোপাধ্য়ায়রা। যাঁরা দীর্ঘদিন কাঞ্চনের সঙ্গে মঞ্চে এবং রিল জগতে কাজ করে এসেছেন। সুজন লেখেন, ‘মাগন রাজার পালা’র শো বাতিলের কথা। প্রতিবাদ আরও জোরাল হতে থাকে। এই আবহে সোমবার নিজের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেন কাঞ্চন।

এরপরই কাঞ্চন মল্লিক ওই ভিডিও-তে বলেন, ‘একটি ধরনামঞ্চে কিছু কথা বলি, যেটা অত্যন্ত সমালোচিত হয়। প্রথমেই আমি জানাই, আমি যা বলেছি তার জন্য আমি অত্যন্ত লজ্জিত এবং দুঃখিত। আমি কোনও সাফাই গাওয়ার জন্য আজকে এই ভিডিয়ো করছি না। আমি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বলছি, আমারও বাড়িতে স্ত্রী, সন্তান আছে। আমার বাড়িতেও একজন বৃদ্ধ মানুষ আছেন, তাঁকে মেডিক্যাল সাপোর্ট দিতে হয়। আমি জানি, ডাক্তারের প্রয়োজন কতটা।’

কাঞ্চনের কথায়, চিকিৎসকদের কর্মবিরতি একেবারেই ন্যায়সঙ্গত। তবে সম্প্রতি তাঁর এক বন্ধু মায়ের অসুস্থতার কারণে তাঁকে ফোন করেছিলেন। কাঞ্চন বলেন, ‘চিকিৎসকদের ধর্মঘট চলছিল। দু’ তিনটি হাসপাতাল ঘুরেও বন্ধুর মাকে ভর্তি করানো যায়নি। চিকিৎসকদের আন্দোলন সঙ্গত কারণেই চলছিল। তবে কিছু পরে বন্ধু আমাকে ফোন করে জানায় তোর সাহায্যের দরকার পড়বে না। মা আর নেই। আর তোকে ডিস্টার্ব করব না। এটা সত্যি আমার কাছে খুব মর্মান্তিক। উনি আমারও মায়ের মতই।’

কাঞ্চনের সংযোজন, ‘ডাক্তার সত্যি ভগবানস্বরূপ। জুনিয়র, সিনিয়র ডাক্তারের ভাগাভাগিও করতে চাইনি। এই আন্দোলন যুক্তিসঙ্গত, ন্যায়সঙ্গত। সেই আন্দোলনকে কোনওভাবেই ছোট করতে চাই না। স্বপ্নেও আসে না সে কল্পনা। আমি চাই দোষীদের কঠোর শাস্তি হোক। আমি যা বলে ফেলেছি তার জন্য সমস্ত ডাক্তারবাবুদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এই ঘটনার পর আমার পরিচিত বহু বন্ধু, সাংবাদিক, ডাক্তার বন্ধু আমাকে ফোন করেছেন। তাঁরা বলেছেন, আমিও মাথা পেতে স্বীকার করেছি আমার ভুল হয়েছে। আমি লজ্জিত, ক্ষমাপ্রার্থী। ক্ষমার থেকে বড় কিছু হয় না, সেই ক্ষমাই আমি ভিক্ষা চাইব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × five =