বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মমতাকে আইনি চিঠি কার্তিক মহারাজের

মুখ্যমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যের জের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ এনে আইনি চিঠি পাঠালেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের কার্তিক মহারাজ। তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক যোগের অভিযোগ করেছিলেন মমতা। মহারাজের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য বিভ্রান্তিমূলক। প্রমাণ দিতে পারলে শাস্তি মাথা পেতে নেব। সঙ্গে দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে জানান, ‘প্রমাণ দিতে পারবেন না, এটা তো খুবই সত্য কথা।’ মুখ্যমন্ত্রীকে এই আইনি চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি কার্তিক মহারাজ এও জানান, সন্ন্যাসীদের নিয়ে বলা মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ক্ষমা না চাইলে, আইনি মামলা করবেন।

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার আরামবাগের সভা থেকে। ওইদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘সব সাধু তো সমান হয় না। এই যে বহরমপুরের একজন মহারাজ রয়েছেন। কার্তিক মহারাজ। আমি শুনেছি অনেক দিন ধরে। আমি ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু যে লোকটা বলে, তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্টকে বুথে বসতে দেব না। তাঁকে আমি আর শ্রদ্ধা করি না।’ মমতা আরও বলেন, ‘আমি চিহ্নিত করেছি, কারা এগুলো করেছে। আসানসোলের একটা রামকৃষ্ণ মিশন রয়েছে। আমি কি রামকৃষ্ণ মিশনকে সাহায্য করিনি? সিপিএম যখন খাবার বন্ধ করে দিয়েছিল, আপনাদের অস্তিত্ব নিয়ে, স্বাধিকার নিয়ে, তখন কিন্তু আমি পুরো সমর্থন করেছিলাম। ইসকনেও আমি ৭০০ একর জমি দিয়েছি। দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে, বলে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য বলো। কেন করবে সাধু-সন্তরা একাজ? ’

এই প্রসঙ্গে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের কার্তিক মহারাজ (স্বামী প্রদীপ্তানন্দ) বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে আমি কিছুই বলিনি। ওঁ পুরোই মিথ্যা কথা বলেছেন। আমি কোনও জায়গায় এ কথা বলিনি। তৃণমূল কর্মীদের বুথ থেকে বার করে দেওয়ার কথা আমি কোথাওই কখনও বলিনি। আমি সন্ন্যাসী। আমি কোনও দল করি না।’

মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরে বাংলা জুড়ে উঠেছে বিতর্কের ঝড়। বেশ কিছু জায়গায় প্রতিবাদ মিছিলও হয়। পুরুলিয়ায় সভা এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই নিয়ে তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘স্বামী বিবেকানন্দ বিদেশের মাটিতে গিয়েছিলেন, যখন ভারতের কথা বলতেন, তখন লাখো মানুষ ওঁর ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু একজন এমন ছিলেন, যিনি ভারতের প্রতি বিদ্বেষ ছিল, তিনি স্বামী বিবেকানন্দকে ধমকিয়েছিলেন, খুব অপমান করেছিলেন। এখন  আবারও সেরকম হচ্ছে। আজ সেরকমই বাংলার মাটিতে হচ্ছে।  নির্বাচনে বাংলার মানুষকে ভয় দেখানো, ধমকানো, হিংসা করানোর তৃণমূল সরকার সরকার এবার সব সীমা পেরিয়ে গিয়েছে।’ পাশাপাশি এও বলেন,  ‘দেশে ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ নিয়ে পুরো বিশ্বে জনপ্রিয়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের প্রকাশ্যেই ধমকাচ্ছেন। মঞ্চ থেকেই হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। বিশ্ব জুড়ে ইসকন, মিশনের লোক থাকেন। তাঁদের লক্ষ্য, মানুষের সেবা করা। নিজের ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করতে এখন তাঁদেরকেই ধমকাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। লাখো মানুষের ভাবনার কথা ভাবছেন না।’

সন্ন্যাসীদের নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিতর্কিত এই মন্তব্য নিয়ে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অধ্যক্ষ দিলীপ মহারাজ জানান, ‘দেশ জুড়ে তো প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই খোদ এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। আর আমরা কী বলব? প্রধানমন্ত্রী নিজে আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছেন।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − 12 =