দুই চিকিৎসককে পুলিশের তলবের প্রতিবাদে মিছিল করে লালবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন চিকিৎসকরা। পাল্টা চিকিৎসকদের ঠেকাতে রীতিমতো ব্যারিকেড করে রাস্তা আটকাল পুলিশ৷ আরজি কর কাণ্ডকে কেন্দ্র করে এমনই আরও এক বেনজির দৃ্শ্যের সাক্ষী থাকল সোমবারের কলকাতা।
আরজি করে নির্যাতিতা মহিলা চিকিৎসকের পরিচয় ফাঁস এবং গুজব ছড়ানোর অভিযোগে রাজ্যের দুই সিনিয়র চিকিৎসক কুণাল সরকার এবং সুবর্ণ গোস্বামীকে তলব করে লালবাজার৷ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩৫ নম্বর ধারায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তলব করা হয় দুই চিকিৎসককে৷ এরই প্রতিবাদে সরব হন শহরের চিকিৎসকরা৷ এরপরই সোমবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জড়ো হন চিকিৎসকরা৷ সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচির পর পুলিশের নোটিস পাওয়া দুই চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে লালবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন বাকি চিকিৎসকরা৷ তলব পাওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে অন্যতম সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘সবাই জানেন এ রাজ্যে যে ঘৃন্য অপরাধ ঘটেছে, সেই অন্যায়কে ধামাচাপা, দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে৷ তার বিরুদ্ধেই আমাদের প্রতিবাদ৷ আমরা চাইলে এর বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারতাম৷ কিন্তু আমরা মুখোমুখি লড়াই করতে চেয়েছিলাম৷ সবশেষে বলি, চোখ যত রাঙাবে, মিছিল তত বাড়বে৷’
চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, ‘জীবনে কত পরীক্ষা দিয়েছি, আজকে পুলিশ আমাদের প্রশ্ন করতে চায়৷ আজকে পুলিশ আমার বিবেক, বুদ্ধি, সমাজ নিয়ে প্রশ্নের উত্তর চায়, সব প্রশ্নের উত্তর দেব৷’
এরপর মিছিল ফিয়ার্স লেনে পৌঁছতেই চিকিৎসকদের আটকায় পুলিশ৷ এরপর সেখান থেকেই দুই চিকিৎসক কুণাল সরকার এবং সুবর্ণ গোস্বামীকে নিয়ে লালবাজারের দিকে নিয়ে যায় পুলিশ৷ দুই চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁদের আইনজীবীরাও যান লালবাজারে।
লালবাজারে ঢোকার আগে কুণাল সরকার বলেন, ‘আমরা ইনভেস্টিগেশন চাইছি তার পরেও মনে রাখতে হবে সমাজ ও রোগীদের কাছে আমাদের একটি দায়িত্ব রয়েছে।’ কুণাল সরকার আরও বলেন, ‘গত সাত বা দশ দিনের ব্যর্থতা আমরা ভুলে যেতে পারি না। ডাক্তারদের একসঙ্গে আসতে হবে। আমাদের মনের কথাগুলি বলতে হবে। পারস্পরিক সমালোচনার কথাও আমাদের শুনতে হবে। এটা একতরফা বলে যাওয়ার সময় নয় এটা বলা ও শোনার সময়। ডাক্তাররা এখন এক স্পর্শকাতর জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছেন। সেখানে অবশ্যই আমরা বিস্মিত যে আমাদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। এই যে মাটিটার উপরে দাঁড়িয়ে আমরা কথা বলছি সেই মাটিটা একদিন মাসে পঞ্চাশ টাকা বেতনে আমাদের পড়িয়েছে।’ এখানেই থেমে থাকেননি কুণাল। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা বিচার চাইছি। আমরা একটা নির্দিষ্ট তদন্ত চাইছি। আমরা মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ। আমাদের ডাক্তারদের একসঙ্গে আসতে হবে। মনের কথা বলতে হবে। বলতে এবং শুনতে হবে। একতরফা বলার এটা সময় নয়। সরকারকে অনুরোধ করব দেখুন ডাক্তাররা কী ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের ডাকা হয়েছে। আমাদের মধ্যে কোনো অভিসন্ধি ছিলা না। এটা পলিটিকাল সমস্যা নয়। সবাই মনে করছে এটা সকলের ঘরের সমস্যা। পুলিশকে বলব আরেকবার পথে নামুন। উপর দিকে কামান দাগবেন। তাতে মানুষের কণ্ঠ রুদ্ধ হবে বলে মনে হয় না।’
তবে চিকিৎসকদের এই মিছিল নিয়েও এ দিন চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বন করেছে কলকাতা পুলিশ। লালবাজার যাওয়ার পথে ফিয়ার্স লেনেই চিকিৎসকদের মিছিল আটকাতে রীতিমতো ব্যারিকে়ড তৈরি করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। বিকেল তিনটের সময় দুই চিকিৎসককে লালবাজারে তলব করা হয়েছিল।