রেমালের তাণ্ডবে জল জমে অবরুদ্ধ কলকাতার জনজীবন

একটানা ভারী বৃষ্টি, সঙ্গে তীব্র বেগে ঝড়৷ ঘূর্ণিঝড় রিমলের জেরে লণ্ডভণ্ড কলকাতাও। এককথায় বিপর্যস্ত কলকাতার জনজীবন। রেমালের তাণ্ডবে নানা জায়গায় ছেঁড়েছ বিদ্যুতের তার, উপড়ে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটিও। অনেক জায়াগায় গাছ পড়ে বন্ধ রাস্তা। আবার টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতার একাধিক রাস্তাও। রেমালের তাণ্ডবে গাছ ভেঙে পড়ে বিপত্তি বরানগর জুড়ে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে বরানগর পুরসভার বিশেষ উদ্ধারকারী দল। বরানগর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বিভিন্ন এলাকাতে গাছ ভেঙে রাস্তায় পড়ে যাতায়াত বন্ধ। এর জেরে ব্যাপক সমস্যায় পড়েন এলাকাবাসী।

কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, রবিবার রাতের দুর্যোগে সবমিলিয়ে কলকাতায় পঞ্চাশটিরও বেশি জায়গায় গাছ পড়ে। গাছ ভেঙে পড়ে গড়িয়াহাট, পার্ক সার্কাস, ঢাকুরিয়ার মতো বিভিন্ন এলাকায়। সোমবারেও জল জমে থাকতে দেখা যায় পার্ক সার্কাস, ক্যামাক স্ট্রিট, বর্ধমান রোড, এস পি মুখার্জি রোড, কলেজ স্ট্রিট এলাকায়। ক্যামাক স্ট্রিটে একটি পাঁচিলও ভেঙে পড়ে৷ লেক মার্কেট এলাকায় বিপজ্জনক ভাবে হেলে পড়ে একটি গাছ। কলেজ স্ট্রিটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও জল জমে যাওয়ায় যান চলাচল করে ধীর গতিতে। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, মহাত্মা গান্ধি রোডেও হাঁটু জল জমে যান চলাচল ব্যাহত হয়৷ সমস্যায় পড়েন পথচারীরা৷ সল্টলেকের এএ, এসি ব্লকের মতো বিভিন্ন রাস্তাতেও গাছ ভেঙে পড়ে৷ তবে কলকাতা পুরসবার তরফ থেকে জানানো হয়, সাধারণ মানুষের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম রাতেই আশ্বস্ত করে বলেছেন, আপাতত কোনও ক্রাইসিস নেই। বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, কিছু কিছু জায়গায় ট্রান্সফরমার উড়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার চেষ্টাও চলে বিদ্যুৎ দফতরের তরফ থেকে।

রেমালের প্রভাব পড়ে মেট্রো পরিষেবাতেও । পার্ক স্ট্রিট এবং এসপ্ল্যানেড স্টেশনের মাঝে মেট্রো ট্র্যাকে জল জমে যাওয়ায় সোমবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে সকাল থেকে প্রায় কয়েক ঘণ্টা কার্যত থমকে থাকে মেট্রো পরিষেবা। তবে মহানায়ক উত্তমকুমার থেকে কবি সুভাষ এবং দক্ষিণেশ্বর থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করে। মেট্রো বন্ধ ছিল মহানায়ক উত্তমকুমার থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত। বাইরে তুমুল বৃষ্টি। আর স্টেশনগুলিতে দম বন্ধ করা ভিড়। মেট্রো দাবি করেছে, দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

অন্যদিকে জল জমে থাকার কারণে সোমবার সকালে মুখ থুবড়ে পড়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলে পরিষেবা।  দক্ষিণ -পূর্ব রেল সূত্রে খবর, টিকিয়াপাড়া রেল ইয়ার্ডের লাইনে জল জমে যাওয়ার কারণেই এই বিপত্তি। জল জমে থাকার কারণে হাওড়া-পাঁশকুড়া, হাওড়া-মেছেদা আপ এবং ডাউনের কিছু লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়। তবে হাওড়া দিঘা আপ এবং ডাউন তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস ছাড়া দূরপাল্লার আর কোনও ট্রেন বাতিল হয়নি। এদিকে রেমালের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত শিয়ালদা দক্ষিণ শাখার রেল পরিষেবাও। ঘূর্ণিঝড় রেমালের দাপটে রাতভর ঝড়-বৃষ্টির জেরে রবিবার রাতে বিপর্যস্ত হয় রেল পরিষেবা।সোমবার সকালেও তার প্রভাব থাকে।এদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় বন্ধ থাকবে ট্রেন চলাচল। শিয়ালদহ শাখায় আগেই ৪৬টি ট্রেন বাতিল হয়েছিল। এরপর সোমাবারও ট্রেন বাতিল। এর উপরে সকাল ৯টা পর্যন্ত দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 4 =