ডাক্তারদের দশ দফা দাবির পাল্টা ১৩ দফা দাবি শাসকদলের সামনে থেকে রাখলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। এই প্রসঙ্গেই প্রশ্ন উঠে গেল এটা রাজ্য সরকারের এক কৌশলী চাল কি না তা নিয়েও। এই তালিকায় রয়েছে চিকিৎসকদের সময়মতো হাসপাতালে আসা, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কাছ থেকে টাকা না ‘খাওয়া’-র মতো একাধিক সব ইস্য়ু। বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। সেখান থেকেই এই তেরো দফা দাবিতে তৃণমূল নেতা যে বক্তব্য রাখেন তাতে বলা হয়েছে,
১) সব হাসপাতালে ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হোক। সেই সঙ্গে ডাক্তারদের ডিউটির সময় অনুযায়ী উপস্থিতি, এবং রোগী দেখাটাও সুনিশ্চিত করতে হবে।
২) সরকারি হাসপাতালের কাজ ফেলে সুবিধামতো ডিউটি বদলে বাকি সময় প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করা চলবে না।
৩) প্রেসক্রিপশানে একই গুণমানের কম দামী ওষুধের বদলে ওষুধ কোম্পানির প্রভাবের জন্য দামী ওষুধ লেখা চলবে না।
৪) ওষুধ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম (পেস মেকারসহ) কোম্পানির স্পনসরশিপে অনুষ্ঠান, দেশবিদেশে ভ্রমণ চলবে না। কারণ ওঁরা সমাজসেবা করেন না। কমিশন,কাটমানির যে অভিযোগ রয়েছে তা বন্ধ করতে হবে।
৫) কথায় কথায় বিভিন্ন পরীক্ষার নামে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কেউ যেন কমিশন না নেন।
৬) ডাক্তারদের ফি যাতে মানুষের নাগালে থাকে, তার কাঠামো চাই। প্রত্যেককে রশিদ দিতে হবে। আর তা করতে হবে সরকারকেই। ৭)হয় সরকারি, নইলে বেসরকারি বেছে নিন। দুটো একসঙ্গে কোনও নিয়ম দেখিয়ে চলবে না।
৮) সাধারণ মানুষের করের টাকার ভর্তুকিতে যাঁরা সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়বেন, তাঁদের সরকারি কাজেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৯) স্পেশালিস্ট,সিনিয়রদের ঠিকমত ডিউটি করতে হবে। লবি করে কলকাতা পোস্টিং বা জেলায় গেলেও কৌশলী রোস্টারে তিন থেকে চার দিন কলকাতায় এসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস চলবে না। জেলার হাসপাতালকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে।
১০) শূন্যপদ পূরণ হোক। পরিকাঠামো বাড়ুক। কিন্তু নিজেদের কর্মক্ষেত্রকে রোগীবন্ধু রাখার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি ডাক্তারদেরও নিতে হবে। কারণ সরকারি কাঠামোতে দুর্বলতা দেখিয়ে রোগীকে বেসরকারিতে যেতে বাধ্য করা/টেনে দেওয়ার অভিযোগ আছে,বন্ধ করতে হবে এসব।
১১) বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তিতে বিপুল টাকা, পড়তে টাকা, সেমিস্টারে ফেল করিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে পাশ-এইসব অভিযোগবন্ধনীতে কিছু ডাক্তারও আছেন। এসবে স্বচ্ছতা ও তদন্ত দরকার।
১২) বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কিছু কোটা দীর্ঘকাল আছে। বুদ্ধবাবু-জ্যোতিবাবু জমানায় এটা ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর কোটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন্ধ করেছেন। কিন্তু হাসপাতালের কোটাগুলি নিয়ে বহু অনিয়মের অভিযোগ, বহু ডাক্তার জানেন,সেগুলি বন্ধ হোক বা স্বচ্ছতা আনা হোক।
১৩) চিকিৎসার গাফিলতিতে নির্দিষ্ট এফআইআর বাধ্যতামূলক হোক।
কুণাল বলেন, “যাঁরা আন্দোলন করছেন শুধু সুরক্ষা-সুরক্ষা করে রোগীদের সুরক্ষা, মানুষের সুরক্ষাও প্রয়োজন। কয়েকজন বর্ষীয়ান ডাক্তার নমস্য। কিন্তু অনেকেই আছেন যাঁরা সরকারি হাসপাতালে মানুষদের বঞ্চিত করে প্রাইভেট হাসপাতালে ডিউটি করেন। তাঁদেরও ভেবে দেখতে বলব।”