ক্যামেরার সামনে খুললেন না কুন্তল, ঘনিষ্ঠ মহলে জানালেন সায়নীর সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের কথা

যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষকে একাধিক অনুষ্ঠান বাবদ টাকা দিয়েছিলেন, ঘনিষ্ঠ মহলে সে কথা স্বীকার করে নিলেন নিয়োগ মামলায় ধৃত তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষ। শুক্রবার আদালত চত্বরে ঘনিষ্ঠদের কাছে সায়নীকে টাকা দেওয়ার কথা স্বীকারও করতে দেখা গেল তাঁকে। কোথায় কী উপলক্ষে কত টাকা দিয়েছিলেন, তাও এদিন জানান কুন্তল।

কুন্তলের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর সঙ্গে সায়নীর আলাপ হয় ২০২১ সালের অগাস্ট মাসে। তারপর থেকে পুজো-সহ মোট চারটি সমাজসেবামূলক কাজের উদ্বোধন বাবদ তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন সায়নী। এই প্রসঙ্গে শুক্রবার আদালত চত্বরে কুন্তল তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে এও জানান, সায়নীকে তিনি উদ্বোধন বাবদ মোট এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। পিআরের মাধ্যমে ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া কালীঘাটের একটি বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানের জন্যও কুন্তলের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন সায়নী। কুন্তলের দাবি, ওই অনুষ্ঠান উপলক্ষে তাঁকে ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়, টলিউডের এক অভিনেতাকেও অনুষ্ঠানের জন্য কুন্তল টাকা দিয়েছিলেন বলেও জানান। শুক্রবার আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে কুন্তল বলেন, ‘আমার অনেক অনুষ্ঠান সায়নী করেছিল। সে সবই ছিল সমাজসেবামূলক অনুষ্ঠান। কালীঘাটেও তেমন একটি অনুষ্ঠানে সায়নী ছিল।’

তবে সায়নীর প্রসঙ্গে কথা বলার সময় বলিউডেরও এক অভিনেত্রীর কথা তোলেন কুন্তল। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, একটি পানশালা উদ্বোধনের জন্য বলিউডের এক অভিনেত্রীকে কুন্তল নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। তবে সেই অনুষ্ঠানটি শেষ পর্যন্ত আর হয়নি। তবে তাতে ওই পাঁচ লক্ষ টাকা ফেরত পাননি বলে দাবি কুন্তলের। আর এখানেই কুন্তলের প্রশ্ন, ওই অভিনেত্রীকে কেন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকছে না ইডি তা নিয়েও।  তবে ক্যামেরার সামনে অবশ্য এইসব লেনদেনের কথা স্বীকার করতে দেখা যায়নি কুন্তলকে । বরং শুক্রবার সাংবাদিকদের এদিন তিনি ঠিক উল্টোটাই জানান,‘কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। কোনও লেনদেন হয়নি। সায়নীকে রাজনৈতিক ভাবে হেনস্থা করার জন্য ডেকেছে ইডি।’

এদিকে এখনও পর্যন্ত সায়নী সংক্রান্ত বিষয়ে যা জানা গিয়েছে, তা বলছে, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে ধৃত তথা তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষের সূত্র ধরে উঠে এসেছে সায়নীর নাম। কুন্তলের সঙ্গে তাঁর কোনও আর্থিক লেনদেন হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর আগে কুন্তলের সঙ্গে সায়নীর একটি ছবি প্রকাশ্যেও আসে। সে প্রসঙ্গে তৃণমূল যুবনেত্রীর যুক্তি ছিল, তাঁরা দু’জন একই দলের সদস্য। তাই এক মঞ্চে থাকতেই পারেন। এদিকে আবার ইডি সূত্রে খবর মিলছে, কুন্তলের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করার সময়েই সায়নীর নাম উঠে আসে।

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সায়নীকে তলব করা হয়েছিল ইডি দফতরে। সে দিন টানা প্রায় ১১ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে। এরপর রাতে সিজিও থেকে বেরিয়ে তৃণমূলের যুবনেত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, তদন্তের স্বার্থে তিনি ১০০ বার ইডির সামনে হাজির হতে রাজি আছেন। দরকার পড়লে সারাদিন ইডি- দপ্তরে থাকতেও রাজি তিনি। এদিকে এরপর বুধবার তাঁকে ফের ইডি দপ্তর থেকে তলব করা হলেও পঞ্চায়েত নির্বানচ নিয়ে ব্যস্ত আছেন বলে ইডি-র তলব এড়িয়ে যান। সঙ্গে অবশ্য আইনজীবী মারফত নথি পাঠিয়ে দেন সিজিও কমপ্লেক্সে। নিজেও করেন ই- মেল।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − eleven =

preload imagepreload image