ভূমিধস বদলে দিয়েছে ওয়ানাড়ের মনসুরের মতো অনেকেরই জীবন

একটা ভূমিধসে পৃথিবীটাই বদলে গিয়েছে ওয়েনাড়ের মনসুরের। পরিবারের ১৬ জন সদস্যকে হারিয়ে দিশেহারা। পৃথিবীটা বাস্তবিক-ই তাঁর কাছে শূন্যতায় ভরা। মনে মনে বিড়বিড় করছেন, ‘আমার আর কিছুই রইল না।’ ওয়েনাড়ের চুরালমালার বাসিন্দা বছর বিয়াল্লিশের মনসুর। মা, স্ত্রী, দুই সন্তান ও বোন এবং বোনের পরিবারের আত্মীয়দের নিয়ে ভরা সংসার ছিল তাঁর। গত ৩০ জুলাই যে ধস নামে তাতে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। স্ত্রী, মা, দুই সন্তান, বোন এবং বোনের পরিবারের ১১ জন ধসের তলায় চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন।

এই ঘটনার ৬ দিন পরও ঘোর কাটেনি মনসুরের। দু-চোখের পাতা এক করতেও পারছেন না। নিজের মননেই আউড়ে চলেছেন ‘আমার আর কিছু নেই। আমার পরিবার, আমার বাড়ি, সব চলে গিয়েছে।’

প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের দিন কাজের জন্য বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন মনসুর। না হলে তাঁর কী হত, তা নিয়ে ভাবছেন না মনসুর। ১৬ জনের সবার মৃতদেহ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। মনসুর এও জানিয়েছেন, ‘এখনও মেয়ের দেহ খুঁজে পাইনি। আমার স্ত্রী, ছেলে, মা ও বোনের দেহ পেয়েছি।’ মনসুরের ভাই নাসির জানিয়েছেন, চার জনের দেহ পাওয়া গিয়েছে। এখনও ১২ জনের দেহ পাওয়া যায়নি। এই প্রসঙ্গে নাসিরও জানান,  ‘আমিও এই এলাকায় বাস করতাম। তবে এখন অন্য জায়গায় থাকি।’ ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গেই এই কয়েকদিন রয়েছেন মনসুর। নাসিরের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের তরফে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কোনও পূর্বাভাস দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘জলস্তর বাড়ার পর দাদাকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমার বাড়িতে আসতে বলেছিলাম। তখন দাদা বলেছিল, তারা নিরাপদেই রয়েছে। কিন্তু, সব শেষ হয়ে গেল। পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আমার ভাই সবকিছু হারাল।’ এদিকে এখনও উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারী দল। ১২ জনের দেহের খোঁজে ধ্বংসস্তূপের সামনে অপেক্ষায় মনসুর। যদি কিছু মিরাক্যাল ঘটে, পরিবারের কাউকে যদি জীবিত পাওয়া যায়, মনসুরের মনের কোণে কোথাও সেই আশাতেও বুক বেঁধে বসে মনসুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six + fifteen =