ভাঙড় ফের এক করল বাম- কংগ্রেস-আইএসএফকে, উঠল ‘সংযুক্ত মোর্চা’র স্লোগান

বহুদিন পর আবার কলকাতার রাজপথে একসঙ্গে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ। একুশের বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ‘সংযুক্ত মোর্চা’ বিষয়টা অনেকটা থিতিয়ে যায়। এই থিতিয়ে যাওয়ার মূল কারণ, বাম-কগ্রেসের বিধানসভা নির্বাচনে একেবারে হোয়াইট ওয়াশ হয়ে যাওয়া। নওশাদের গ্রেপ্তারির সময়ে বামেরা রাস্তায় নেমেছিল আইএসএফের সঙ্গে। কিন্তু কংগ্রেসকে সেই সময়ে দেখা যায়নি। নওশাদদের সঙ্গে অধীরদের একটা দূরত্ব তৈরির কথাও শোনা গিয়েছিল। কারণ, নওশাদ স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন, ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি মার্কা কথাবার্তা’ তাঁর একেবারেই না-পসন্দ। ব্রিগেডের মঞ্চের সংযুক্ত মোর্চার সেই মলিন হয়ে যাওয়া ছবিটায় যেন ফের প্রাণ ফিরল ভাঙড়ের ঘটনায়। ভাঙড়ের রক্তারক্তি, পঞ্চায়েতের ভোট লুঠ, গণনায় কারচুপি, অভিযোগ বিস্তর। আর সেই অভিযোগগুলিকে সামনে রেখেই অতৃণমূল-অবিজেপি শক্তির অস্বস্তি প্রমাণের চেষ্টা দেখা গেল কলকাতার রাজপথে। আবার একসঙ্গে রাস্তায় নামল তিন দল। ধর্মতলা থেকে মৌলালি পর্যন্ত হল মিছিল। বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিমের মতো প্রথম সারির বাম নেতারা হাঁটেন মিছিলের সামনের সারিতে। এই মিছিলে এদিন পা মিলিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ চট্টোপাধ্য়ায়ও। শুধু তাই নয়, এদিন নওশাদের বক্তব্য রাখার সময় আবার ভিড়ের মধ্যে থেকে শোনা গেল সংযুক্ত মোর্চার জয়ধ্বনিও। বহুদিন পর কলকাতার রাস্তায় শোনা গেল সেই স্লোগান ‘সংযুক্ত মোর্চা জিন্দাবাদ’।

ম্যাটডোরের উপর তৈরি অস্থায়ী মঞ্চ থেকে একসঙ্গে দেখা গেল বাম-কংগ্রেস-আইএসএফকে। কংগ্রেস নেতৃত্ব ও নওশাদকে দু’পাশে নিয়ে বক্তব্য রাখলেন মহম্মদ সেলিমরা। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘৬০ জন মানুষের রক্ত খেয়েছে তৃণমূল।’ সঙ্গে এও বলেন, ‘বাংলার মানুষ গণতন্ত্রের হত্যা প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে। শুধু কলকাতায় নয়, রাজ্যের সব জেলায় বাম-কংগ্রেস-আইএসএফের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছে।’ সুজনবাবুর মুখেও শোনা গেল ‘গণতন্ত্রের হত্যার’ অভিযোগ। বলছেন, ‘গণতন্ত্রকে বাঁচাতে, বাংলাকে বাঁচাতে, মানুষকে বাঁচাতে আজ রাস্তায় নামতেই হয়েছে। আগে আমরা করেছিলাম, আজ সবাই এসেছে।’

মিছিলে ছিলেন নওশাদ সিদ্দিকিও। গত কয়েকদিন ধরে ভাঙড়ে যে অশান্তি, রক্তারক্তি হয়েছে সেই নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। রাজ্যজুড়ে যা চলছে, তা ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ বলেই মনে করছেন তিনি। বললেন, ‘শাসক যেন-তেন প্রকারে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইছে।’ এদিন প্রদেশ কংগ্রেস রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ চট্টোপাধ্য়ায়কেও নির্বাচন পরবর্তী হিংসার অভিযোগে নিশানা করতে দেখা যায় শাসকের বিরুদ্ধে। বলেন, ‘আমরা সকলে মিলে লড়াই করব।’

এদিনের এই মিছিলে সবাই মিলে লড়াইয়ের বার্তার পাশাপাশি অশান্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বার্তাও এলেও কোথাও যেন একটা ঘাটতি থেকে গেল। কারণ, আজকের মিছিলে কংগ্রেস নেতৃত্বের মুখে বার বার রাজ্যের সামগ্রিক অশান্তির কথা শোনা গেলও আলাদা করে নওশাদদের বিষয়ে কিছু বলতে দেখা গেল না। যেমন স্পষ্ট নয়, অধীর আর নওশাদ উভয়েরই ‘কমন বন্ধু’ সেলিম-সুজনরা, নাকি প্রকৃত অর্থেই তিন দল একে অন্যের পাশে দাঁড়াবেন পরবর্তী ক্ষেত্রে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 14 =