লোকসানে চলা বাস রুট তুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি হাতে

জ্বালানির চড়া দাম, প্রতিযোগিতা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিপুল খরচ, এই তিনের জেরে সরকারি বাস নিয়ে নাভিশ্বাস উঠে গেছে রাজ্য সরকারের পরিবহন দফতরের। দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া না বাড়ানো আর তারই সঙ্গে জ্বালানির দাম এবং এই সব বাস মেইনটেন্যান্সের যে খরচ তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ফলে দিনের পর দিন এমন সব ঘটনায় লোকসানের মুখে সরকারি বাস। যাত্রী না হলেও তবুও নিয়ম মেনে রাস্তায় প্রতিদিন নামাতে হয় বাস। এবার এই লোকসান সামাল দিতে নয়া সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার।

সূত্রে খবর, সমস্যা সামাল দিতে অলাভজনক সরকারি বাস রুটগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একদিকে রুট বাঁচানো ও অন্যদিকে পরিষেবা সচল রাখতে এই উদ্যোগ নিচ্ছে পরিবহন দফতর। সম্প্রতি ট্রাম কোম্পানি, সিএসটিসি এবং ভূতল পরিবহণ নিগমের ১৯টি রুটের ৪০টি সরকারি বাসকে শর্তসাপেক্ষে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি এই পদ্ধতিতে সাফল্য আসে তবে আগামী দিনে আরও রুট ও সরকারি বাসকে বাঁচিয়ে রাখতে এই পথে হাঁটতে পারে সংস্থা।

সঙ্গে এও জানা যাচ্ছে, সরকারি বাসরুটকে বেসরকারিকরণে টেন্ডার সম্প্রতি টেন্ডার ডেকেছিল রাজ্য। ৪০টি সরকারি বাস ও ১৯ রুটে বিনিয়োগে আটটি সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছে বলে খবর। তবে ১৯ রুটে বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নিলেও কোন কোন রুট তা এখনও জানা যায়নি।

বেসরকারি সংস্থার হাতে ১৯ রুটের সরকারি বাসকে তুলে দেওয়া হলেও নির্দিষ্ট কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে সরকারি তরফে। সূত্রের খবর, শর্তগুলির মধ্যে প্রধান শর্ত হল, ওই রুটের সরকারি বাসে যা ভাড়া, তাই নিতে হবে। কোনওভাবেই ভাড়া বাড়ানো চলবে না। এছাড়া মাসে অন্তত ২৬ দিন বাসগুলিকে রাস্তায় নামাতে হবে। বেসরকারি সংস্থার উপর বাসের জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ, ড্রাইভার, কন্ডাক্টরের সমস্ত খরচ খরচার দায়িত্ব থাকবে। তবে যাত্রা শেষে বাসগুলিকে সরকারি ডিপোতেই এনে রাখতে হবে। বাস চালানোর জন্য প্রতিমাসে সরকারকে যাত্রী অনুযায়ী নির্দিষ্ট টাকা দিতে হবে। এছাড়া বাসের দায়িত্ব হস্তান্তর বাবদ লাইসেন্স ফি ৩০ হাজার টাকা বেসরকারি সংস্থার থেকে নেওয়া হবে বলে খবর।

এদিকে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানান, আড়াইশো-পৌনে তিনশো বাস কেনা হচ্ছে। আর যে সমস্ত বাসের সিটে সমস্যা রয়েছে, বা রঙ চটে গিয়েছে সেগুলিকে মেরামত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আড়াইশো-পৌনে তিনশোর মতো নতুন বাস কেনার অর্ডার দিয়েছি। তার মধ্যে কিছু সিএনজি আছে, কিছু ইলেকট্রিক আছে, কিছু জিডেলও আছে। আবার ই ভেহিক্যাল, ১১৮০-টা বাসের জন্য একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম ১ বছর আগে। কিন্তু সেটা দিল্লিতে একটা মামলা হয়েছে বলে সমস্যা হয়ে গেল। না হলে ওটা ২ বছের মধ্যে ১০০০-১১০০ বাস দিয়ে দিত।’ পরিবহণণন্ত্রী আরও বলেন, ‘যত বাস আছে সেগুলিকে সারিয়ে, নতুন করে রঙ করে, সিট বদলানোর ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। যাতে সরকারি বাসগুলি একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে।’

অন্যদিকে, আগামীদিনে অনলাইনে বাসের ভাড়া মেটানোর সুবিধা চালু করারও ইঙ্গিত দেন পরিবহণমন্ত্রী। তিনি জানান, কিছু জায়গায় অনলাইনে টিকিট কাটার ব্যবস্থা আছে। বিশেষত দূরপাল্লার বাসে অনলাইন সিস্টেম আছে। আর এবার নিত্যযাত্রায় কন্ডাক্টরদের ক্ষেত্রেও এই ব্যবস্থা রাখার ভাবনাচিন্তা তাঁদের আছে বলে জানান মন্ত্রী। এক্ষেত্রে নতুন বাসগুলি রাস্তায় নেমে গেলেই এই ব্যবস্থা চালু করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × one =