২০২১–এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই একুশের মঞ্চ থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্লোগান ছিল, ‘খেলা হবে। এবার বললেন ‘পদ্ম ফুল উপড়ে ফেলা হবে’। একইসঙ্গে এও বলেন, ‘বিজেপিকে প্রথম বাংলাবিরোধী আমরা বলেছি। তারই প্রেক্ষিতে আমরা জনতার গর্জনের ডাক দিয়েছিলাম। সেটা শুধু রাজনৈতিক স্লোগান নয়। সেটাই বিজেপির আসল চরিত্র। বিজেপি বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে তাচ্ছিল্য করে, ময়দানে জিততে না পেরে নির্লজ্জের মতো গরিব মানুষকে মারার পরিকল্পনা করে। টাকা আটকে রাখে। ওদের একটাই পরিচয়, বাংলাবিরোধী।’ সোমবারের একুশের মঞ্চ থেকে ঠিক এই ভাষাতেই কেন্দ্রকে বিঁধলেন তৃণমূলের সেকেন্ড –ইন–কমান্ড।
এটাও ঠিক যে, সোমবার একুশের এই মঞ্চ ছিল ২০২৬–এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে নিঃসন্দেহে শাসকদলের কাছে ছিল মেগা ইভেন্ট। এর আগে গত বুধবারই বোঝা গিয়েছিল বাঙালি অস্মিতাকে সামনে রেখেই একুশের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে বিঁধতে চলেছে তৃণমূল। তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটতে দেখা গেল না। বক্তব্যের শুরু থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের সুর বেঁধে দিলেন বাঙালি অস্মিতার ছোঁয়ায়। এটাও ঠিক যে গত কয়েক মাসে বাংলার রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়েছে প্রধানত এই একটা ইস্যুতেই। কারণ, ভিন রাজ্যে গিয়ে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলা ভাষায় কথা বলে হেনস্থার শিকার হয়েছেন। এরপরই গত বুধবারে বাঙালি অস্মিতার রক্ষার স্বার্থে পথে নামেন মমতা–অভিষেক। সেদিন যেখানে শেষ হয়েছিল একুশের মঞ্চ থেকে ঠিক যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন অভিষেক। বিজেপিকে বিদ্ধ করে এদিন তিনি বলেন, ‘বাংলায় জিততে না পেরে, বাঙালি দেখলে গাত্রদাহ হয় বিজেপির।’ এরপর ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে সোমবার এই ভাষাতেই সুর চড়াতে দেখা গেল তৃণমূলের সেকন্ড–ইন–কমান্ডকে। এদিন সংসদেও অধিবেশনে বাংলায় কথা বলার পরামর্শ দেন অভিষেক। এরপরই অভিষেক বলেন, ‘গর্ব করে বলব, আর আমাদের এবার নিয়ম করে নেওয়া উচিত, অন্তত এই সেশনে সংসদে বাংলায় বক্তব্য রাখব, দেখি কার গায়ে জ্বালা। আগে দিনে যদি ১০ বার বলতাম, এখন পাঁচশো বার বলব।’ এরই প্রেক্ষিতে তুলে ধরেন অসমের কথাও। বলেন, ‘এ বার অসম ফরেন ট্রাইব্যুনাল, বাংলার মাটিতে যার কোনও এক্তিয়ার নেই, তারা চিঠি পাঠাচ্ছে বাংলার রাজবংশীদের। বলছে, বাংলাদেশি।’ আর এখানেই অভিষেকের প্রশ্ন, ‘আমরা বাংলায় কথা বলি, সেটা আমাদের অপরাধ?’ এরপরই প্রত্যয়ের সঙ্গে জানান, ‘১০০ বার বাংলায় কথা বলব।’ একইসঙ্গে তিনি বার্তা দিলেন, গর্বের সঙ্গে বাংলায় সবাইকে কথা বলারও। এখানেও উঠে এল সেই বাঙালি অস্মিতার কথা। কারণ, কযেকদিন আগেই দুর্গাপুরের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বক্তব্য রাখার সময় বলতে শোনা গিয়েছিল, মা কালী , মা দুর্গার কথা। সেদিন সেই প্রচলিত রাম নাম নিতে শোনা যায়নি প্রধানমন্ত্রীকে। সেই প্রসঙ্গেই এদিন অভিষেক বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিদ্ধ করে বলেন, ‘ঠেলায় পড়ে এখন জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা বলছে বিজেপি। আগেই অভিযোগ তুলেছিল শাসকদল। অভিষেকের কথায়, ‘আমার নাম দিয়ে লিখে রাখুন, ২৬–এর পরে জয় বাংলা বলাব। না বলাতে পারলে আমাদের ক্ষমতা নেই। এটাই বাংলার জয়। যে বাংলাকে ভাতে মারতে চেয়েছিলে, সেই বাংলার মানুষের পায়ে মাথা ঠুকে জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা বলতে হচ্ছে। এটাই বাংলার জয়। আর ১০ মাস। তার পরে জয় বাংলা বলবে।’
সোমবার শহিদ দিবসের বক্তব্যের একেবারে শুরুতেই বিজেপিকে খোঁচা দিয়ে অভিষেক বলেন, ‘বিজেপির কাছে ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স, নির্বাচন কমিশন, পেগ্যাসাস, সবই আছে। তার পরেও বাংলায় বিজেপি জিততে পারেনি। কারণ, আমাদের মতো কর্মী ওদের কাছে নেই। আর আমাদের কর্মীরাই আমাদের শক্তি। বিজেপি ভোটের ময়দানে জিততে না পেরে, বাংলার মানুষকে ভাতে মারতে গায়ের জোরে টাকা আটকে রাখে। এটাই ওদের বাংলা বিরোধিতার পরিচয়।’ তবে এই বিরোধিতা ধোপে টিকবে না তাও এদিন স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়েও দেন অভিষেক। এরই রেশ ধরে ২০২৬–এর বাংলায় বিধানসভা ভোটে অভিষেকের চ্যালেঞ্জ, ‘এ বার ৫০–ও পেরোবে না বিজেপি। কারণ, ওদের উপর মানুষের ভরসা নেই।’ সঙ্গে হুঁশিয়ারির সুরে এও বলেন, ‘যে ক’টা ছাইপাশ আর গুটিকয়েক বাংলা বিরোধী পড়ে আছে, ঝেঁটিয়ে বিদায় দিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলতে হবে। আজ থেকে ৩২ বছর আগের ২১শে জুলাই সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে ১৩ জন নিজের প্রাণ দিয়ে ভারতের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিল। ২০২৫–এর ২১ জুলাই বলি, আজও ইলেকশন কমিশনের কারচুপি রুখতে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের রাস্তায় নেমে প্রাণ দিতে হলে দেবো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতি নিয়ে দিল্লিতে বৃহত্তর আন্দোলন হবে। পাশাপাশি অভিষেক মনে করিয়ে দেন, ‘দিল্লির জয় হিন্দ কলোনিতে মাছে–ভাতে বাঙালির উপর আক্রমণ হচ্ছে। জল, বিদ্যুৎতের কানেকশন কেটে দিচ্ছে। অভিষেকের প্রশ্ন, বিজেপি বাংলা দখল করলে কী করত?’ তবে বাংলাকে অপমান করলে যে ছাড় নেই, তা এদিন খুব স্পষ্টভাষায় বুঝিয়ে দেন তিনি।