মহুয়া ওঁদের যোগ্য জবাব দেবে, কৃষ্ণনগর থেকে বার্তা মমতার

‘মানুষই মহুয়া মৈত্রকে জিতিয়ে দেবে।’ কৃষ্ণনগরের সভা থেকে রবিবার এমনই বার্তা দিতে শোনা গেল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। প্রসঙ্গত, লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে। আর এই বহিষ্কারের কারণ নিয়ে মমতার ব্যাখ্যা, লোকসভা নির্বাচনের প্রথম প্রচার সভা থেকে মমতা বলেন, ‘মহুয়ার উপরে দেখেছেন কী অত্যাচার হয়েছে, তাঁকে লোকসভা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, সে জোরে জোরে কথা বলত। বিজেপির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলত। আপনারা জেতানোর পরও ওঁকে তাড়িয়ে দিয়েছে এত বড় সাহস।’ আর এখানেই তৃণমূল সুপ্রিমোর আর্জি, ‘তাই ওঁকে জিতিয়ে আবার পাঠাতে হবে। ওদের যোগ্য জবাব দেব। যাতে ওদের মুখোশ খুলে দেয়।’ প্রসঙ্গত, মহুয়াকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হলেও তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল দল। সেই মহুয়া মৈত্র শুধু প্রার্থীই করেছে তাই নয়, তাঁরই কেন্দ্র থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরুও করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিনের সভায় মহুয়ার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত নিয়েও সরব হন মমতা।  এরই পাশাপাশি মমতা কৃষ্ণনগরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, তিনি বলেন, ‘ভোটে দাঁড়ানোর পরেও তাঁর বাবা-মা বেচারা কিছু জানেন না, তাঁদের বাড়িতে রেড করে এসেছে। ওদের কাজ মহুয়াকে যেভাবে হোক হারানো। মহুয়াকে আপনারা জেতাবেন। রানাঘাটেও জেতাবেন। বাংলার ৪২ টা সিটে তৃণমূলকে জেতাবেন।’ এদিকে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে কৃষ্ণনগর রাজবাড়িরই বধূ অমৃতা রায়কে প্রার্থী করেছে বিজেপি। বিজেপির এই প্রার্থীকে নিয়েও এদিন কটাক্ষ করতে দেখা যায় তৃণমূল সুপ্রিমোকে। টেনে আনেন, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে ব্রিটিশদের যোগাযোগের বিষয়টি।

কৃষ্ণনগরের ধুবুলিয়ার জনসভা থেকে একগুচ্ছ ইস্যু নিয়ে নিশানা করেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে৷শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় স্তরে জোট শরিক, ‘ইন্ডিয়ার’ সদস্য বাম-কংগ্রেসকেও এক বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ শানান তিনি৷ এদিন ফের মমতার মুখে উঠে আসে রাজ্যে ‘একলা চলো’র প্রসঙ্গ৷ এদিন মমতা বলেন, ‘আমার আজ কয়েকটা কথা, কেন তৃণমূলকে ভোট দেবেন? কেন বিজেপি, সিপিআইএম, কংগ্রেসকে ভোট দেবেন না? ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স নামটা আমার দেওয়া। তৈরি করাও আমার। আমি সেটা ভোটের পর দেখে নেব। কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া আর বিজেপিকে দেওয়া এক। আমি শুনেছি এখানে নাকি ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স নামে লড়াই করছে। কিন্তু এখানে তো জোট হয়নি। এখানে ঘোট হয়েছে। বাম-কংগ্রেসকে একটাও ভোট নয়।’ এদিকে কয়েকদিন আগেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে নয়া প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা গিয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে৷ শুভেন্দু বলেছিলেন, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে এই প্রকল্পে টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে ৩ হাজার করা হবে৷ এদিনের মঞ্চ থেকে শুভেন্দুর নাম না করে সেই মন্তব্যকে কটাক্ষ করেন মমতা৷ এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমোর বক্তব্য, ‘মোদিকে ঝুটা কথা বলতে হচ্ছে। দেওয়াল লিখছে তিন হাজার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেব। আমি বলছি আগে ১০০ টাকা দে। তুমি দেবে কোথায় থেকে? এটা আমাদের।’ একইসঙ্গে এ প্রশ্নও তোলেন, ‘মেয়েদের জন্য কিছু করেছ?’ এদিনের জনসভা থেকে সিএএ নিয়ে সুর চড়াতে দেখা গেল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। লোকসভা নির্বাচনের মুখে সিএএ চালু সহ কেন্দ্রের একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে চরম কটাক্ষ করেন তিনি। এরই রেশ ধরে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে মমতার সতর্কবাণী, ‘এর পরে ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়ে আসবে। নিজের সর্বনাশ কি নিজে করতে চান? যদি না করতে চান তাহলে ভুলেও আবেদন করবেন না নাগরিকত্বের জন্য। যাঁরা বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন তাদের আগে করতে বলুন।’ এর পাশাপাশি কেন্দ্রকে নিশানা করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জানতে চান, ‘কমিটিতে কাকে করেছেন যেন? একটা পোস্ট অফিসের লোক, সেন্সাস-এর লোক।’ এরই সূত্র ধরে মমতার হুঁশিয়ারি, ‘যাঁরা বলছেন নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন এটা ভুল কথা। সিএএ-টা হচ্ছে মাথা, এনআরসি-টা হচ্ছে লেজ। সিএএ করলেই এনআরসিতে পড়ে যাবেন। বিজেপির যাঁরা লোকসভায় দাঁড়িয়েছে তাঁরা কেন সিএএ-তে আবেদন করছেন না? কারণ, সিএএ-তে অবদান করলেই বিদেশি হয়ে যাবে। ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। মমতা আরও যোগ করেন, “সিএএ করার ক্ষমতা থাকলে একবছর আগে কেন করল না? ইলেকশনের আগে শুধু ভাঁওতা। যে আবেদন করবেন তখনই হয়ে যাবেন বিদেশি।’

এদিনের সভা শেষে প্রচণ্ড রোদ এবং গরমের মধ্যে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের সকলকেই ধন্যবাদ জানান তৃণমূল সুপ্রিমো। আর মহুয়া মৈত্রর হাত ধরে তাঁর জন্য ভোট প্রার্থনা করতেও দেখা গেল মমতাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 + nineteen =