শেষ দফায় ১ জুন ভোট তিলোত্তমায়। লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে বড় পদক্ষেপ নিয়ে বিজেপি যোগ দিয়েছেন এতদিনের তৃণমূলের সৈনিক থাকা ক্ষুব্ধ তাপস রায়৷ ফলে শেষ দফার নির্বাচনে সার্চ লাইটের আলোয় কলকাতা উত্তর লোকসভা। এদিকে ফুল বদলের পরে উত্তর কলকাতা আসন থেকেই বিজেপির টিকিটে লোকসভা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি৷ বৃহস্পতিবার সেই কলকাতা উত্তর কেন্দ্রেই নির্বাচনী প্রচারে খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো।
এতদিন উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ, রাজ্যের নানা প্রান্ত দাপিয়ে বেড়ানোর পর বৃহস্পতিবার কলকাতা উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সমর্থনে তাপস রায়ের বাড়ির সামনেই সভা করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিন বিকেলে বউবাজারে ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সামনে সুদীপ বন্দোপাধ্যায়ের সমর্থনে এই সভামঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো চরম কটাক্ষের ভাষায় তাপস রায়কে বিদ্ধ করে বলেন, ‘এখানকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে আমি কিছু বলব না। চলে গেলে কেন? আমার পরিবারেও তো নানা ভাবে সমস্যা হয়। এই সুদীপ বন্দোপাধ্যায় তো জেলে গিয়েছিল। ইকনমি ক্লাস থেকে বিজনেস ক্লাসে গিয়েছিল বলে। কই দল ছেড়ে তো ও যায়নি। এই যে মদন মিত্র, ওকেও জেলে পাঠিয়েছিল। যদি কিছুই না থাকে তাহলে তুমি চলে গেলে কেন?’ এরই পাশাপাশি নাম না করে তাপস রায়কে মমতা মনে করিয়ে দেন, ‘তিনবার জিতেছো।দলের প্রতীকে জিতেছ। আমার কাছে খবর ছিল গত এক বছর ধরে যোগাযোগ ছিল। আমি ওঁর সঙ্গে ছাত্র রাজনীতি করিনি। আমি অশোক দেবের সঙ্গে করেছি। কংগ্রেসে এদের আলাদা দল ছিল। সোমেন মিত্রের সঙ্গে ছিল। ও সুদীপ বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বার বার নানা নোংরা কথা বলেছে। আপনি সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স থেকে বাঁচতে বিজেপিতে গিয়েছেন।উত্তর কলকাতার মানুষ আপনার জামানত বাজেয়াপ্ত করবে।’ এরপরই স্থানীয় মানুষজনের প্রতি তৃণমূল সুপ্রিমোর বার্তা, ‘সুদীপ বন্দোপাধ্যায় পরের বার দাঁড়াবে কিনা জানি না। তবে এই বার সুদীপ বন্দোপাধ্যায়কে জেতান।’
এদিনের জনসভাতেও তৃণমূল সুপ্রিমোর গলায় শোনা যায় ওবিসি- সার্টিফিকেট নিয়ে হুঁশিয়ারির কথা। কেন্দ্রকে বিঁধে জানান, ‘হঠাৎ করে বললেন ১৫ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল। হবে না। সার্টিফিকেট থাকবে। গরমের ছুটি শেষ হয়ে গেলে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আমি জানি কীভাবে নিয়ম বদলাতে হয়। সঠিক করতে হয়। আপনি এ-তে খেলেছেন। আমি বি-তে খেলব। আপনি সি-তে খেলবেন। আমি জেডে খেলব। খেলা হবে।’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এই কলকাতা উত্তর কেন্দ্র নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিস্তর চাপানউতোর চলেছে। সুদীপের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে দেখা গিয়েছে দলের একাংশের নেতা-কর্মীদের। দলেরই কাউন্সিলর মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কুণাল ঘোষ। একাধিক নাম নিয়ে বেড়েছে চাপানউতোর।
এরই পাশাপাশি এদিন সুদীপকে পাশে নিয়ে অভয়বাণী দিতেও দেখা যায় মমতাকে। এদিনের সভায় সমেবত জনতার উদ্দেশে মমতার বার্তা, ‘বৃষ্টি হলেও কিন্তু ভোট দেবেন। ঝড় হলেও দেবেন। ভয় দেখালেও দেবেন। সুদীপদা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলুন আপনি কেন চিন্তা করছেন! কিছু লোক আছে। কেউ তো কিছু বলবে। বলে যাক। যার যা ইচ্ছে বলে যাক। আপনার যা ইচ্ছা তা করে যান। তাহলেই দেখবেন ঈশ্বর ও আল্লাহ তেরে নাম সব কো সুমতি দে ভগবান।’
এদিকে মমতা যখন এ কথা বলছেন, তখন মঞ্চে হাজির ফিরহাদ হাকিম থেকে কুণাল ঘোষ, ফিরহাদ, কুণাল, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, মদন মিত্র, শান্তনু সেন, পরেশ পালের মতো হেভিওয়েট সব তৃণমূল নেতারা। প্রকাশ্য সভা থেকে মমতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা যায় সুদীপকেও। বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা দেশকে সম্পূর্ণভাবে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের সাফল্য-সার্থকতা আমরা বারবার উল্লেখ করেছি। কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটাই প্রথম জনসভা। উত্তর কলকাতার এই সভা দিয়ে কলকাতার সভা শুরু করলেন তিনি। আগামীদিনে মমতা দেশ নেত্রীতে পরিণত হবেন, এটা আমরা বিশ্বাস করি।’