নীতি আয়োগ বৈঠকে যোগ দিয়ে বিরোধী সুর ভিন্ন মাত্রায় বাঁধলেন মমতা

ইন্ডি জোটের বাকি মুখ্যমন্ত্রীরা নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করেছেন। সেখানে সেই বৈঠকে অংশ নেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা জানানোর পর রাজনৈতিক মহলে চাপানউতোর তৈরি হয়। জল্পনা শুরু হয়, নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়ে মমতা নরম অবস্থান নিচ্ছেন কি না তা নিয়েও। তবে শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়ে কার্যত এক ঢিলে দুই পাখি মারতে দেখা গেল বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে। শনিবারের ঘটনায় ভারতীয় রাজনীতিতে এখন আলোচনার কেন্দ্রে তিনি।

এদিন রাষ্ট্রপতি ভবনে নীতি আয়োগের যে বৈঠক হয় তাতে বিরোধী জোটের সাত জন মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক বয়কট করেছিলেন। বিরোধী জোটের শিবির থেকে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, মাঝপথে বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি বিরোধীদের কথা বলতে চেয়েছিলেন। বাজেটে বৈষম্যের কথা তুলেছিলেন। কিন্ত, বলতে দেওয়া হয়নি। মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই কারণে তিনি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। মমতার বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসার পরই দিল্লির রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে। তাঁর মাইক বন্ধের অভিযোগ ওড়ায় কেন্দ্র। তড়িঘড়ি ভিডিয়ো বার্তায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ বলেন, ‘উনি মিডিয়ার সামনে বলেছেন যে ওঁর মাইক অফ করে দেওয়া হয়েছিল। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন যে তাঁর মাইক অফ করে দেওয়া হয়েছিল। মিথ্যার উপরে কাহিনি তৈরি না করে ওঁর উচিত সত্য বলা।’ কেন্দ্র যুক্তি দিলেও ততক্ষণে ভারতীয় রাজনীতির সার্চ লাইটটা এসে পড়েছে মমতার ওপর। আর এখানেই রাজনীতির বিশ্লেষকেরা বলছেন, এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়ে তিনি বোঝালেন, কেন্দ্র বিরোধী রাজ্যগুলির সঙ্গে বঞ্চনা করছে। তিনি যে ইন্ডিয়া জোটের অংশ সেই বার্তা দিলেন। অন্যদিকে, বাংলার মানুষকে মমতা বার্তা দিলেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজ্যের দাবি-দাওয়া চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, বিজেপি বাংলা বিরোধী। বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে বাংলার কথা বলতে পারলেন না।

মুখ্যমন্ত্রী যখন নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন, তখন বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিল, ইন্ডিয়া জোটের কোনও মুখ্যমন্ত্রী যখন যাচ্ছেন না, তখন মমতা কেন যাচ্ছেন তা নিয়ে। সেই সময় তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, ‘বিজেপি বিরোধিতা কারও কাছ থেকে আমাদের শিখতে হবে না। বাংলার মাটিতে আমরা বিজেপিকে হারিয়েছি। নিশ্চিতভাবে আমরা ইন্ডিয়া জোটে রয়েছি। একইসঙ্গে আমাদের একটা স্বাতন্ত্র্য আছে।’ এদিকে শুক্রবার মমতাও দিল্লি যাওয়ার সময় জানিয়েছিলেন, বৈঠকে যোগ দেবেন বলে তিনি আগেই জানিয়েছিলেন। কথা রাখতেই দিল্লি যাচ্ছেন। বিরোধীদের দাবি তুলে ধরবেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠকের মাঝপথ থেকে বেরিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মমতা। তারপরই রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন তৃণমূল নেতৃত্ব। কেন্দ্রকে আক্রমণ করে এক্স হ্যান্ডলে তৃণমূল লেখে ‘মাইক বন্ধ সরকার’। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনও এই নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। শুধু তাই নয়, স্ট্যালিন এ প্রশ্নও তোলেন, একজন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কি এমন আচরণ করা উচিত? বিজেপি যদিও মমতার অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে, যে নীতি আয়োগের বৈঠকে মমতার যোগ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, সেই বৈঠক নিয়েই জাতীয় রাজনীতিতে এখন চলছে জোর চর্চা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − 4 =