নন্দীগ্রাম-খেজুরির ঘটনায় নাম না করে শুভেন্দুকে বিঁধলেন মমতা

ষষ্ঠ দফা নির্বাচনের মাঝেই শেষ দফার নির্বাচনী প্রচারে শনিবার দমদমের রাজারহাট গোপালপুরের জনসভায় প্রচার সারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই মহিষাদলে তৃণমূল কর্মী হত্যার ঘটনা নিয়ে সরব হতে দেখা গেল তাঁকে। পাশাপাশি, ষষ্ঠ দফায় নন্দীগ্রাম-খেজুরির ভোট নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

প্রসঙ্গত, ভোটের আগের দিন শুক্রবার রাতে মহিষাদলের ধামাইতনগর এলাকায় এক তৃণমূল কর্মীকে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। নিহত তৃণমূল কর্মীর নাম শেখ মইদুল। এই ঘটনায় নাম না করে এদিন বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণও করেন মমতা। এদিনের সভা থেকে মমতা বলেন, ‘ এঁরা ভোটে জিততে পারে না। নন্দীগ্রামে আবার ওই গুণ্ডাটা গুণ্ডামি করেছে। গদ্দারটা শুক্রবার মধ্য রাতে আমাদের মেন লোকককে খুন করিয়েছে। আমাদের লোকদের খুন করিয়েছে, যারা ভোট করায়।’

প্রসঙ্গত, মইবুল বেতকুন্ডু গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল সদস্য ছিলেন। এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচিত ছিলেন তিনি। এই হত্যার ঘটনায় বিজেপির দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ভোটের আগের দিন ওই এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম রাখতেই বিজেপি এই কাণ্ড করেছে বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের।

এদিকে, নন্দীগ্রামে এক বিজেপি মহিলা কর্মীর হত্যাকাণ্ডের পর একের পর এক তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অগ্নি সংযোগ, ভাঙচুর, দোকানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতি আর শুক্রবারে। ফলে ভোটের দিন সকাল থেকেই কার্যত থমথমে ছিল গোটা নন্দীগ্রাম এলাকা। এই বিষয়টি নিয়েও এদিনের সভা থেকে সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের শুভেন্দু অধিকারীর নাম না নিয়ে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে নন্দীগ্রাম, খেজুরি দখল করিয়েছে। কী ভাবছ? শুধু ওই দুই দিয়ে বাংলা হবে? ঘেচু হবে। তুমি আট-দশটা বুথ নিয়ে থাকো।’

এর পাশাপাশি দমদম লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ সৌগত রায়ের সমর্থনে এদিন সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের মঞ্চ থেকেও সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাতিল হয়ে যাওয়া ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিলের ঘটনায় ক্ষোভপ্রকাশ করে জানান, ‘হঠাৎ বলল, ১৫ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করো, এত সস্তা! হঠাৎ বলল ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করল। অনেক কষ্ট করে শংসাপত্র জোগাড় করতে হয়।’ এদিনের অসভা থেকে গত কয়েক বছরে রাজারহাট, নিউটাউন, বাগুইআটি অঞ্চল কী ভাবে গত কয়েক বছরে সাজিয়ে তোলা হয়েছে, তার খতিয়ান তুলে ধরেন তিনি।

এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে ‘অক্লান্ত’ সৌগত রায়েরও প্রশংসা শোনা যায়। মমতা বলেন, ‘আমার সঙ্গে আছেন অধ্যাপক সৌগত রায়। জীবনে ওনার কোনও ক্লান্তি নেই। বিয়ে বাড়ি বলুন চলে যাবে, পৈতে বাড়ি বলুন চলে যাবে, পুজোয় বলুন চলে যাবে। পকেটে লজেন্স নিয়ে ঘুরছে।’ তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ৩৪ বছরের বাম সরকারকে উপড়ে ফেলতে পারলে তাঁরা বিজেপিকেও উপড়ে ফেলবেন। এদিনের এই সভামঞ্চ থেকে ভূয়সী প্রশংসা করলেন রাজারহাট গোপালপুর বিধানসভার বিধায়ক অদিতি মুন্সির। মমতা জানান, এই সভা অদিতির আমন্ত্রণেই তিনি করছেন। সঙ্গে এও বলেন, ‘এই ছোট্ট মেয়েটিকে আমি খুব ভালবাসি। আমি যখন বিধাননগরে মিছিল করব বলে ঠিক করলাম, ও আমাকে মেসেজ করল। বলল, দিদি তুমি আমার বাগুইআটিতে একবার আসবে না? আমাদের লোকেরা তোমার একটা মিটিংয়ের জন্য আশা করে আছে। একবার ভাবলাম, মিনাখাঁ যাব, তারপর বিধাননগরে। তাও এই ছোট্ট মেয়েটিকে বললাম। আমি ওকে সুইট অ্যান্ড কিউট গার্ল বলি। আমি ওকে বললাম তুমি দিদির কাছে আবদার করেছে, দিদি রাখবে না এটা কখনও হতে পারে? আমি সঙ্গে সঙ্গে সুজিত, সব্যসাচীকে ফোন করে বললাম দেবরাজকে ফোন করে বল আয়োজন করুক।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − three =