সপ্তাহের শুরুতেই রেল দুর্ঘটনা। সোমবার সকালে উত্তরবঙ্গের রাঙাপানি স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে। পিছন থেকে মালগাড়ির সজোর ধাক্কায় লাইনচ্যূত হয়ে যায় ট্রেনের একাধিক কামরা। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল থেকে ৮ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে৷ আহতের সংখ্যা ৬০-এরও বেশি৷ আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দুর্ঘটনার পরেই এ বিষয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ উদ্ধারকার্যের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেন। নির্দেশ দেন মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্যসচিব-সহ রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকদের।
শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস বিপর্যয় নিয়ে রেলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্ঘটনাস্থলে রওনা হওয়ার আগে রেলের পরিষেবা নিয়ে একগুচ্ছ ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। রেলের ‘কবচ’ নিয়েও মুখ খোলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে মমতা জানান, বলেন, ‘অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস আমি তৈরি করে দিয়ে এসেছিলাম। বন্দে ভারত বলে যেটা চালাচ্ছে, সেটা দুরন্তরই মতো। দুরন্ত একমাত্র স্পিড আপ হয়েছিল রাজধানীর পরে। সেটাকেই নকল করে করেছে। যতটা না করেছে, তার থেকে বেশি ভাড়া বাড়িয়েছে।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, তখন অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস করেছিলাম। আমি নিজে মারগাঁওতে গিয়েছিলাম, সেখানে দেখার পর আবিষ্কার করে প্রত্যেক ট্রেনে অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস চালু করা হয়েছিল। যদিও চালকও ঘুমিয়ে পড়েন, অ্যালার্ম দেবেন, দুটো ট্রেন কাছাকাছি চলে এলে অ্যালার্ম দেবে। আগে মানুষের রক্ষাকবচ হোক, তারপর কথা।’
শুধু তাই নয়, দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে রেলের বক্তব্যের প্রেক্ষিতেও প্রশ্ন তুলে দেন মমতা। টেনে আনেন ওড়িশার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ। তাঁর বক্তব্য, বালেশ্বরে এখনও দুর্ঘটনাস্থলে অনেক দেহ পড়ে রয়েছে, যেগুলো শনাক্তই করা সম্ভব হয়নি। সেগুলো সব ‘এক লটে জ্বালিয়ে’ দেওয়া হবে বলেও বিস্ফোরক অভিযোগ করেন মমতা।
এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘দুর্ঘটনার খবর ভারত সরকারে কাছে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধারকার্য শুরু হয়। চিকিৎসা পরিষেবায় গতি আনা থেকে শুরু করে রক্তের ব্যবস্থা-সবই স্থানীয় প্রশাসনের তরফে করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা নিয়ে রেলের বক্তব্যেও প্রশ্ন তোলেন মমতা। রেলের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ৯ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি রয়েছে একাধিক জন। এদিকে পিটিআই সূত্রে খবর, ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মমতা টেনে আনেন বালেশ্বরে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে। তিনি বলেন, “আমি সেখানে গিয়েছিলাম। এখনও মনে হয় ওখানে প্রচুর দেহ পড়ে রয়েছে। শনাক্তকরণ হয়নি। হয়তো এক লটে জ্বালিয়ে দেবে। অথচ যাদের গেল, তাদের গেল।’
এরই পাশাপাশি রেলের পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ করেন মমতা বলেন, ‘রেলের একটা শ্রী ছিল, আজ কী অবস্থা। এটা কোনও সমালোচনা নয়। ট্রেনের বেডগুলোতে শুতে দেওয়া হয় তাতে নোংরা, বাথরুমও পরিষ্কার করা হয় না, খাবারের মানও অত্যন্ত নিম্ন। রেলের মাধুর্য নষ্ট করে দিয়েছে।’
এদিকে বিমান না পাওয়ায় দুর্ঘটনাস্থলে বিকেলের আগে পৌঁছাতেই পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী। আর এই ঘটনায় রীতিমতো উষ্মাপ্রকাশ করে এদিন জানান, বিমান সঙ্কুলানের অভাবে সোমবার বিকেলের আগে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দিতে পারেননি তিনি৷ মমতা বলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে মনিটরিং করছি৷ আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করি৷ ফ্লাইট পাইনি। দুর্দশা ফ্লাইটের৷’
সূত্রে খবর, সোমবার বিকেলে উত্তরবঙ্গে পৌঁছে বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে সোজা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে যাবেন তিনি। সেখানেই দেখা করবেন আহতদের সঙ্গে।