বৃহস্পতিবার থেকেই মমতা কার্যত লোকসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে দিলেন। বিজেপিকে যেমন আক্রমণ শানিয়েছেন, তেমনি ছেড়ে কথা বলেননি কংগ্রেস, সিপিএমকেও। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কিংবা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম একবারের জন্যও উচ্চারণ করেননি। নাম নেননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরও। যদিও গদ্দার, রাজাকার বলতে তাঁর নিশানায় ছিলেন শুভেন্দুই। মমতা বলেন, বালুকে (প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক) কেন গ্রেফতার করেছে, জানেন? যাতে ও জেলায় দলের কাজ, ভোটের কাজ না করতে পারে। এখন আবার নেতারা এসে বলছেন, আরও গ্রেফতার কর, আরও গ্রেফতার কর। যেই বালুকে গ্রেফতার করা হল, ওমনি সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি একসঙ্গে মাঠে নেমে পড়ল।
এর পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে ‘চোরেদের জ্যাঠামশাই’ বলে বিদ্ধও করেন। বৃহস্পতিবার দেগঙ্গায় তৃণমূলের এক কর্মিসভায় মমতা বলেন, ‘সবাইকে দেখলে চোর চোর বলে গালি দিচ্ছে। নিজেরা তো ডাকাতদলের সর্দার এক একটা। কোটি কোটি টাকা চুরি করছেন বিজেপির নেতারা। আবার বলছে, আরও গ্রেফতার কর। সবাইকে জেলে ঢোকাও। জেলে না ঢোকালে ভোটে জিতবে কী করে।’এরই রেশ টেনে মমতা এও বলেন, ‘ওরে, একটার বদলে দুটো বিড়ি খেলে চোর বলতে পারিস। আর তোরা যে কোটি কোটি টাকা চুরি করছিস। তারা বেলা? যারা সব চেয়ে বেশি তৃণমূলকে জ্বালিয়েছিস, সেই গদ্দার, রাজাকাররা সমানে চুরি করছে। তোরা তো ছিঁচকে চোর না, চোরেদের ঠাকুর্দা, ডাকাত সর্দার। আর আমাদের দেখলেই চোর বলছে। পুলিশ দেখলে চোর বলছে, আমলা দেখলে চোর বলছে। কটা বিজেপি নেতা জেলে গিয়েছেন। আর বিরোধীদের ধরে ধরে জেলে পুরছে। তাঁর অভিযোগ, সারা দেশে এজেন্সিরাজ চলছে। ইডি, সিবিআই যত জেলে ঢোকাচ্ছে, যত টাকা লুট করছে, সেই টাকা বিজেপি নেতাদের ঘরে যাচ্ছে।’
এদিকে আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের দ্বার উদ্ঘাটন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেদিন গর্ভগৃহে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হবে। লোকসভা ভোটের আগে রামমন্দিরের দরজা সকলের জন্য খুলে দিয়ে বিজেপি হিন্দু ভোট একত্রিত করার চেষ্টা করছে। এক কথায় এটা বিজেপির হিন্দুত্বের বড় ত্রাস। মমতা এদিন উত্তর ২৪ পরগনার চাকলা ধামে বাবা লোকনাথ মন্দির চত্বরে কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। সেখানে এবং দেগঙ্গার দলীয় সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাকলা করেছি, দক্ষিণেশ্বর করেছি, কালীঘাট করেছি, তারকেশ্বর করেছি। আমি হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, জৈন সব ধর্মের অনুষ্ঠানে যাই। তিনি সংখ্যালঘুদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিজেপি এলে অত্যাচার বাড়বে। সাবধান থাকবেন। আপনাদের উপর কিছু হলে আমি পাহারাদার থাকব।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে সিএএ প্রসঙ্গও।এই প্রসঙ্গে মমতা এদিন জানান, যখনই ভোট আসে, তখনই বিজেপি সিএএ নিয়ে নানা কথা বলে। শুধু শুধু মতুয়াদের বিজেপি নেতারা বিভ্রান্ত করেন বলেও অভিযোগ করেন মমতা। এর রেশ ধরে মমতা এদিন এ প্রশ্নও রাখেন, ‘মতুয়াদের নতুন করে নাগরিকত্ব দেওয়ার কী আছে। তাঁরা তো এই দেশ তথা রাজ্যেরই নাগরিক। না হলে মতুয়ারা প্যান কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড পেলেন কী করে। আসলে ভোট এলেই মতুয়া তাস খেলে বিজেপি তাঁদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়।’ একইসঙ্গে তিনি এও আশ্বাস দেন, মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য সরকার অনেক কাজ করেছে। এমনকী তিনি মতুয়াদের বড়মার চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়েছিলেন।