দোরগোড়ায় পুজো। ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়া। ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী। এদিকে নবান্ন সূত্রে খবর, সম্ভবত এ মাসের শেষে তথা ৩১ জুলাই বা অগাস্টের গোড়ায় নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ওই বৈঠক ডাকা হবে। তারপর সেই অমোঘ ঘোষণার অপেক্ষা পুজো কমিটির পিছু চাঁদা নিয়ে। তবে এ ব্যাপারে এ বছর হয়তো আর কোনও রহস্য বাকি নেই। গত বছর রাজ্যের ক্লাবগুলিকে দুর্গাপুজো আয়োজনের জন্য ৮৫ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। অর্থাৎ, ২০২৩ সালের তুলনায় ১৫ হাজার করে বাড়ানো হয়েছিল চাঁদা। সেই সভাতেই মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ২০২৫ সালের দুর্গাপুজোয় চাঁদা আরও বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা করা হবে।
গত বছর পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল ২৩ জুলাই। নেতাজি ইনডোরে সেই সভা চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন অনুদানের অঙ্ক ঘোষণা করছিলেন, তখনই সভাস্থলে আর্জি জানানো হয়েছিল চাঁদা বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা হোক। কিন্তু তা নাকচ করে দিয়ে ৮৫ হাজারের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে বলেন, ধাপে ধাপে বাড়াতে হবে। আগামী বছর এক লক্ষ টাকা করে দেবেন বলেও জানান তিনি।
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয় অনুদান ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে ২৫ হাজার টাকা অনুদান ঘোষণা করে সরকার। করোনার সময় থেকে অনুদান বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়। ২০২২ এবং ২০২৩ সালে আরও ১০ হাজার টাকা বাড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর্থিক অনুদানের পাশাপাশি গত বছর পুজো কমিটিগুলোর ফায়ার লাইসেন্স ফি মকুব করা হয়েছিল, বিদ্যুৎ মাশুলে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছিল। এবারও সেগুলি বজায় থাকতে পারে।
তবে পুজোয় এই অনুদান দেওয়া নিয়ে মামলাও গড়িয়েছিল আদালতে। যদিও আদালতে সেই মামলা টেকেনি। কারণ, আদালতে রাজ্য জানিয়েছিল, দুর্গাপুজোর সঙ্গে বাংলার মানুষের আবেগ, সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে। অনুদান বন্ধ করে দিলে অনেক পুজো কমিটির পক্ষেই বাংলার এই সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে।
এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রয়েছে। তাঁর মতে, বাংলার দুর্গাৎসব কেবল একটা পুজো নয়। ইউনেসকো একে দ্য ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মর্যাদা দিয়েছে। পুজোর সময়ে বাংলায় ছোট, বড়, মাঝারি শিল্প অন্তত চল্লিশ–পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা ব্যবসা করে। তাতে সাড়া বছর ধরে লক্ষ লক্ষ মানুষের সংসার চলে। সুতরাং এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার দায় সরকারেরও রয়েছে। তা ছা়ড়া পুজো কমিটিগুলো সারা বছর ধরে বিভিন্ন সামাজিক করে। তাদেরও উৎসাহ দেওয়া দরকার।
এদিকে এই ঘটনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধরানা, রাজ্য সরকার অনুদান ঘোষণার পর থেকে পুজো ঘিরে অতীতে যে চাঁদার জুলুম দেখা যেত তা বন্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে রাজ্যের অনুদানের টাকায় বিভিন্ন ক্লাব থিমের প্রতিমা, মণ্ডপ গড়েন। সেই সূত্রে দুর্গা পুজোকে ঘিরে ইউনেস্কো থেকে সেরার শিরোপাও পেয়েছে বাংলা।