‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে ক্ষমতা থেকে সরাতে হলে সুর নরম করলে হবে না। গণ আন্দোলন করতে হবে। আর এই আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর সেখানে সক্রিয় অংশ নিতে হবে প্রত্যেক বাড়ির একজন পুরুষকে। বাংলার হিন্দুকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতেই হবে।’ সঙ্গে এও বলেন, শুভেন্দু অধিকারী একা বিরোধিতা করবেন বা বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের লেখনীতে শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ পাবে তা হলে চলবে না, মমতাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকেই। রবিবার ধর্না মঞ্চ থেকে এমনই বার্তা দিতে দেখা গেল ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ আর্জুন সিংকে। শুধু তাই নয়, লোকসভা নির্বাচনের পর উপনির্বাচনেও যে ভরাডুবি হয়েছে তা নিয়েও। এই ইস্যুতেই এবার নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাঠগড়ায় তোলে বঙ্গ বিজেপি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নোডাল অফিসারের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন দলের নেতা অর্জুন সিংহ। নির্বাচন কমিশন সব দেখেও না দেখার ভান করেছে বলেও দাবি করেন তিনি। শুধু তাই নয়, এদিন তাঁর নিশানায় ছিল রামকৃষ্ণ মিশনও। তিনি এদিন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কেও নিশানা করেন।
এদিকে আবার শনিবার চার বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ফল বেরিয়েছে। সেই আবহেই রবিবার রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসে বিজেপি। এই ধর্না মঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অর্জুন বলেন, ‘শুভেন্দু যখন ঘরছাড়াদের নিয়ে যাচ্ছিলেন, রাজ্যপাল কি আসতে পারতেন না! কিন্তু এই বাংলারই প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় সাহেব যখন ছিলেন, রাস্তায় নেমে এসে অত্যাচারিত মানুষের কথা শুনতেন।‘ এরই রেশ ধরে মানিকতলা বিধানসভার উপনির্বাচন প্রসঙ্গে অর্জুন সিং বলেন, ‘এই যে মানিকতলায় নির্বাচন হল, আধা সামরিক বাহিনীর যে নোডাল অফিসার, লালবাজারে বিনীত গোয়েলের সঙ্গে বসে টাকা নিয়ে ভোটটা করিয়েছেন। এখানকার সিইও, আমরা ওয়েবকাস্টিং তুলে ধরে চোখে আঙুল দিয়ে দেখালাম যে, চার জন ঘুরে ঘুরে ভোট দিচ্ছে। কিন্তু বললেন, ‘না তো, তা তো দেখতে পাচ্ছি না’! ছ’বছর ধরে বসে আছে, লজ্জা লাগে।’
ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং মুখ খোলেন ২০২৪-এর লোকভা নির্বাচন নিয়েও। রবিবার তিনি যে বক্তব্য রাখেন, তাতে একটা ব্য়াপার স্পষ্ট যে লোকসভা নির্বাচনে এক বড়সড় প্রহসন হয়েছে। সঙ্গে তিনি এও জানান, ঠিক ভাবে নির্বাচন হলে বিজেপি অধিক আসনে জয়লাভ করত। শুধু তাই নয়, শাসকদলকে এদিন বিদ্ধ করেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ। শাসকদল সম্পর্কে অর্জুন শ্লেষের সঙ্গে বলেন, ‘বাংলায় তৃণমূলকে আপনি লেখা পড়া শেখাবেন? এরা পড়াশোনা জানে না। এরা চোর, ডাকাত। মহিলাকে ধর্ষণ করে মাটিতে পুঁতে দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কথা বলছেন না।’ রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতা বলেন, ‘রাজ্যপালকে ফাঁসানোর জন্য শ্লীলতাহানির কেস করা হচ্ছে। দু’জন আইপিএস-এর নাম দিল্লি থেকে চাওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত তাঁরা গ্রেফতার হয়নি।’ এরপরই লোকসভা নির্বাচন নিয়ে মুখ খোলেন অর্জুন। এদিন স্পষ্ট ভাষায় জানান, ‘পূর্বের চিফ সেক্রেটারি করোনার সময় উনি ২২০০ কোটি টাকা দুর্নীতি করেছেন। উনিই ভোটের নাম প্রহসন করেছেন। সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতেন ৩২ শতাংশ আর আমরা থাকতাম ৪৬ শতাংশে।’ সঙ্গে এও বলেন, ‘৩০ শতাংশ ভোট আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে নিয়েছেন। বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া সাত শতাংশ মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দিচ্ছেন।’ এরই রেশ টেনে অর্জুন সিং এদিন এও বার্তা দেন, ‘মাঠে নেমে লড়াই করতে হবে। শুধু বাড়িতে বসে কিংবা সাংবাদিক সম্মেলন করে বাংলা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরানো যাবে না।’
প্রসঙ্গত, রবিবার ভোট পরবর্তী হিংসার প্রতিবাদে রাজভবনের সামনে ধরনায় বসে রাজ্যের পদ্ম-শিবির। উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপি নেতা তাপস রায়, অর্জুন সিং সহ আরও অনেকেই। এর পাশাপাশি বিক্ষোভ সভাতে উপস্থিত ছিলেন অসীম সরকার,কৌস্তভ বাগচী,অশোক দিন্দারা। একই সঙ্গে প্রতিবাদ মঞ্চে নিয়ে আসা হয় ভোট পরবর্তী আক্রান্তদের পরিবারকে।