বেআইনি নির্মাণ ভাঙা নিয়ে গাফিলতির অভিযোগে ডিজি বিল্ডিংকে ধমক দিতে দেখা গেল মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে। শনিবার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটে। এদিন মেয়র আধিকারিকদের ধমক দিয়ে বলেন, ‘বসে থাকলে হবে না কাজ করুন’। সঙ্গে এও বলেন, ‘এমন ভাবে কাজ করুন যাতে আপনাদের সন্তানরা গর্ব করে বলতে পারে, আমার বাবা কলকাতা পুরসভায় কাজ করেন। আপনাদের দায়িত্ব মানুষের পরিষেবা নিশ্চিত করা।’
এরপর তিনি পুর আধিকারিকদের পরামর্শ দেন, দায়িত্ব পালনে ঢিলেমি না করে কাজ এমনভাবে করতে হবে, মানুষ যাতে পুরসভাকে ‘চোরপোরেশন’ না মনে করে। একজন মানুষেরও যেন না মনে হয়, কোনও লুকোচুরি খেলা চলছে। কোথাও পরিষেবা দিতে গিয়ে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হলে সেই বিষয়টি সরাসরি তাঁকে জানানোর কথাও বলেন ফিরহাদ। প্রসঙ্গত, এদিন ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা ফোন করে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ জানান। তাঁর বক্তব্য, ‘আমার বাড়ির কাছে একটি বেআইনি নির্মাণ পুরসভা বার–বার ভেঙে দিলেও আবার নতুন করে হচ্ছে। কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।’ এরপর কেন এমন হচ্ছে, তা নিয়ে সরাসরি ডিজি বিল্ডিংয়ের কাছে জানতে চান মেয়র। উত্তরে ডিজি বিল্ডিং জানান, ‘প্রথমে নিম্ন আদালত ওই নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে নির্মাণকারী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্টও ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিলে ফের নির্মাণকারীরা নিম্ন আদালতে যান। সেখানে বিষয়টি বিচারাধীন।’ ডিজি বিল্ডিংয়ের এমন যুক্তি শুনে মেজাজ হারান মেয়র। তিনি বলেন,‘কখনও হাইকোর্টের রায়ের উপরে লোয়ার কোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বাজে যুক্তি দিচ্ছেন।’
মেয়র ফের জানতে চান, ‘সমস্যার কথা কেন আমাকে জানানো হয়নি, কেন এই সমস্যা নিজের হাতে ধরে রেখেছেন?’ এই প্রশ্নের কোনও সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি ডিজি বিল্ডিং। এরপর ফিরহাদ স্পষ্ট ভাবে সমস্ত আধিকারিকদের জাানান, মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে, বেআইনি বিল্ডিং ভাঙতে গিয়ে কোনও এলাকায় কোনও অসুবিধা হলে সঙ্গে –সঙ্গে তাঁকে জানাতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশ কমিশনারকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার ব্যবস্থা করা হবে।
এ দিন মেয়রের কাছে জানতে চাওয়া হয় কলকাতায় কি বেআইনি নির্মাণ বেড়ে গিয়েছে? ফিরহাদ বলেন, ‘শহরে কোথাও কোনও বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে না। বেআইনি নির্মাণ এখন কমে গিয়েছে।’ তাঁর যুক্তি, ‘অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকরা পাড়ায়–পাড়ায় ঘুরে বহু বেআইনি নির্মাণ চিহ্নিত করেছেন। সেই সব জায়গায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, এর আগে কসবার ঘটনার সময় পুলিশকে ধমক দিতে দেখা গিয়েছিল মেয়রকে। তিনি বলেছিলেন ‘এনাফ ইজ এনাফ। উত্তরপ্রদেশের কালচার এখানে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। বাংলা সংস্কৃতির জায়গা। পুলিশকে বলব, অ্যাক্ট নাও। পুলিশ কোথায়? ’ এরপর শনিবার ফের পুরকর্মীদের উদ্দেশ্য কড়া বার্তা দিতে দেখা গেল ফিরহাদ হাকিমকে।