খনি ক্ষেত্র ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা ও বিকাশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, জানালেন খনি ও খনিজ দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবঅজয় তিওয়ারি

অসম একটি খনিজ সমৃদ্ধ রাজ্য যেখানে বিরল মৃত্তিকা এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পাওয়া যায়। ৩০ বছর পর শান্তি ফিরে আসার ফলে, যে অঞ্চলগুলি আগে দুর্গম ছিল, বা অকল্পনীয় ছিল, সেগুলি এখন মুক্ত। অ্যাডভান্টেজ অসম ইনভেস্টমেন্ট সামিটের সময় শুধুমাত্র খনির ক্ষেত্রেই ১৪টি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং সরকার এই সম্ভাবনাগুলিকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য কাজ করছে। অসম সরকারের স্বরাষ্ট্র, খনি ও খনিজ দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব  অজয় তিওয়ারি অ্যাসোচেম আয়োজিত খনিজ ও খনি সম্মেলন২০২৫ এ তৃতীয় সংস্করণে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনটাই জানান।

ভারতের খনিজ সম্পদ এবং উন্নয়নের লক্ষ্য সম্পর্কে তিওয়ারি এদিন এও বলেন, ‘বিশ্ব আশা করছিল যে ২০৫০ বা ২০৬০ সালের মধ্যে ভারত নেট জিরো হয়ে যাবে, কিন্তু আমরা স্পষ্ট ছিলাম যে আমরা ভারতের বিকাশের গতিপথের সঙ্গে আপোস করতে পারি না। খনি ক্ষেত্র ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং আমাদের টেকসই পদ্ধতিতে একটি উন্নত দেশে পরিণত হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ২০৪৭ সালের মধ্যেবিকাশিত ভারতএবং ২০৭০ সালের মধ্যেনেট জিরো’-র লক্ষ্য স্থির করেছেন।

পাশাপাশি তিনি এও জানান, দাভোসে, জি 7 দেশগুলির কাছ থেকে চাপ ছিল যে আমাদের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেওয়া উচিত কিন্তু আমরা একটি গতিপথের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি চালিয়ে যাব। আমরা ইতিমধ্যেই ৫০০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎসের কথা ঘোষণা করেছি এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৭৫ গিগাওয়াট পর্যন্ত ব্রাউন ফিল্ড তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করব। শক্তির চাহিদা অনেক বেশি। আমরা কেবল পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস থেকে সেই চাহিদা পূরণ করতে পারি না।

কনক্লেভে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারত সরকারের খনি মন্ত্রকের জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর জেনারেল অসিত সাহা জাান, ‘এই বাল্ক খনিজগুলির ক্ষেত্রে ভারত একটি খুব ভাল বাস্তুতন্ত্র পেয়েছে এবং সবকিছুই রয়েছে, তবে এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচিত পণ্য, বিরল মাটি এবং বিরল ধাতু সম্পর্কে অনেক কিছু করার আছে। জিএসআই এর অনুসন্ধান প্রকল্পগুলির ৫০ শতাংশ বিরল মৃত্তিকা এবং বিরল ধাতুগুলিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, যা ইভি এবং ক্লিন এনার্জি প্রযুক্তির জন্য অত্যাবশ্যক। অসম, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলে আমরা খুব ভালো সম্ভাবনা পেয়েছি, যেখানে জিটু পর্যায়ের অনুসন্ধান চলছে। আমাদের পৃথিবীর এই অংশে প্রতিটি খনিজ থাকবে না, অন্যান্য দেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে বিনিময় করতে হতে পারে।

এর পাশাপাশি ভারত সরকারের খনি মন্ত্রকের ভারতীয় খনি ব্যুরোএর খনি নিয়ন্ত্রক (পূর্ব অঞ্চল) ডঃ পুখরাজ নেনিভাল জানান, ‘বৈশ্বিক বিদ্যুতায়ন, ডিজিটালাইজেশন এবং নগরায়ণের জন্য খনিজ উত্তোলন, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির ক্ষেত্রে দশগুণ বৃদ্ধি প্রয়োজন। আমাদের খনিজ ও খনি ক্ষেত্র আর সহায়ক কাজ নয়, বরং এটি জ্বালানি নিরাপত্তা, পরিকাঠামো এবং সবুজ শিল্পায়নের কৌশলগত স্তম্ভ। খনিজ উত্তোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত পরিবেশগত ও সামাজিক ব্যয় হ্রাস করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য খনির ক্ষেত্র দ্বৈত আবশ্যিকতার মুখোমুখি। স্থায়িত্ব একটি ব্যবসায়িক আবশ্যক এবং ভবিষ্যৎ হল পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি অপারেশন, বৈদ্যুতিক বহর এবং সবুজ হাইড্রোজেন ব্যবহার করে কম কার্বন খনন।

এদিন অ্যাসোচেমের মাইনিং সাব কাউন্সিল ইস্টএর চেয়ারম্যান সঞ্জীব গনেরিওয়ালা সম্মেলনে প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘বৈশ্বিক চাহিদা এবং জাতীয় অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভারতের খনিজ যাত্রাকে রূপ দেওয়ার জন্য যৌথ প্রতিশ্রুতি রয়েছে।আমাদের জিডিপিতে ৩ শতাংশ প্রত্যক্ষ এবং প্রায় ৭ শতাংশ অবদানের সাথে, খনির সবসময়ই অর্থনীতির মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এমন এক নির্ণায়ক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি যখন লিথিয়াম, কোবাল্ট, নিকেল, ভ্যানেডিয়াম, টাইটানিয়াম, বিরল মৃত্তিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলি সিদ্ধান্ত নেবে যে আমরা কীভাবে পরিচ্ছন্ন শক্তি, বৈদ্যুতিক গতিশীলতা, ডিজিটাল শিল্প এবং কৌশলগত প্রযুক্তিগুলিকে শক্তি দেব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − 5 =