আনন্দপুরের গুলশন কলোনিতে প্রকাশ্যে বোমাবাজি, গুলিগালার ঘটনা নতুন নয়। শহরের মধ্যে থেকেও যেন দুষ্কৃতিদের ‘মুক্তাঞ্চল’হয়ে উঠেছে আনন্দপুরের গুলশন কলোনি। কুপিয়ে খুন থেকে শুরু করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা। এমন এক আবহে ফের এই গুলশন কলোনিতেই বোমা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাণ্ডব চালাতে দেখা গেল দুষ্কৃতিদের।
সোমবার সকালে গুলশন কলোনিতে পুরসভার পাইপলাইনের কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন পুরসভার শ্রমিকরা। অভিযোগ জেসিবিও ভাঙচুর করা হয়। দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের সেই সিসি ফুটেজ প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে হামলা, তা এখনও জানা যায়নি।
ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন কাউন্সিলর তথা বোরো চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান,’রবিবার রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত কয়েকজন দুষ্কৃতী হাতে চপার, বোমের বস্তা নিয়ে গুলশন চত্বরে কিছু সাধারণ মানুষকে মারধর করে এবং কলকাতা পুরসভার যে শ্রমিকরা পাইপলাইনের কাজ করছিলেন, তাঁদের থেকে টাকা-পয়সা চায়। না দিলে মারধর করে। যে গোষ্ঠী এই ঝামেলা করছে তারা আজ নতুন নয়। আগেও ঝামেলা করেছে। পুলিশে অভিযোগ করার পরও অদ্ভুতভাবে পুলিশ এদের ধরার ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রয়েছে। তারপরও দু’চারদিন পরই জেল থেকে এরা বেরিয়ে যায় আর নতুন করে কিছু একটা ঘটনা ঘটায়।’ একইসঙ্গে কলকাতা পুরসভার ১০৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আরও জানান, এই দুষ্কৃতিরা কেউ এলাকার নন। সব তপসিয়ার বাসিন্দা। এখানে আসছে আর অপরাধ করে চলে যাচ্ছে। আমি নিজে একাধিকবার পুলিশকে এই নিয়ে চিঠি লিখেছি। ওদের উপর ভরসা রেখেছিলাম। কিন্তু অদ্ভুতভাবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। দল যদি আমার থেকে কিছু জানতে চায়, তবে তা জানাবেন বলেও জানান কাউন্সিলর। এদিকে কাউন্সিলরের কাছে এ খবরও পৌঁছেছে, যাঁদের মারধর করা হয়েছে, তাঁদের ওই দুষ্কৃতিরা হুমকি দিয়েছে কাউন্সিলরকে গুলি করারও । এই প্রসঙ্গেই কাউন্সিলর এও মনে করেন, এতদিন এই গুলশনকে কেন্দ্র করে অনেকে লুটেপুটে খাচ্ছিল। তিনি আসার পর সেটা যেহেতু আর হচ্ছে না, তাই বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। তাঁকেও প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, গত কয়েক বছরে একাধিক অপরাধমূলক ঘটনায় উঠে এসেছে ইএম বাইপাস সংলগ্ন গুলশন কলোনির নাম। সম্প্রতি কসবায় পুরপ্রতিনিধিকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর চেষ্টার ঘটনাতেও পুলিশি তদন্তে সামনে এসেছে গুলশন কলোনির সিন্ডিকেট-বিবাদ। তার জেরেই সুশান্ত ঘোষের উপরে হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানতে পারেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি অপরাধের ঘটনায় বার বার গুলশন কলোনির নাম জড়ানোর বিষয়টি লালবাজারের নজর এড়ায়নি। কিন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গুন্ডা দমন শাখাকে গুলশন কলোনি নিয়ে প্রশ্নের সামনে পড়তে হলেও এখনও বদলালো না দুষ্কৃতি দৌরাক্ম্যের সেই চেনা ছবিটা।