মোদি শিবিরের স্ট্র্যাটেজি ‘এক দেশ, এক ভোট’

পাখির চোখ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। এবার মোদি শিবিরের স্ট্র্যাটেজি ‘এক দেশ, এক ভোট’। আর এ নিয়েই সেপ্টেম্বর মাসে সংসদে পাঁচ দিনের বিশেষ অধিবেশন ডেকেছেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি। এই বৈঠক চলবে ১৮ থেক ২২ সেপ্টেম্বর। এই অধিবেশনের উঠতে পারে ‘এক দেশ, এক ভোট’ বিল। এজন্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি কমিটিও গঠিত হয়েছে বলে খবর। কেউ কেউ যেমন এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানাচ্ছেন, কেউ আবার এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছেন। আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে তরজা।

‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ এই বিল চালু হলে

গোটা দেশে থাকবে একই নির্বাচনের ব্যবস্থা। একই সময়ে হবে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনগুলি। অর্থাৎ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের মেয়াদ শেষ হবে একই সময়ে। বর্তমানে আমাদের দেশে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন ভিন্ন সময়ে হয়। যে রাজ্যে যখন সরকারের মেয়াদ শেষ হয়, তখনই সেই রাজ্যে হয় বিধানসভা নির্বাচন। এই নিয়ম চালু হলে কমবে নির্বাচনের খরচ। কারণ প্রতি নির্বাচনে বিপুল টাকা ব্যয় হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিটি রাজ্য বিপুল অর্থ ব্যয় করে। যদি এক দেশ এক নির্বাচন ব্যবস্থা হয় তবে এই খরচ অনেকটাই কমবে বলে আশা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের এক বড় অংশ।

শুধু তাই নয়, এক দেশ এক নির্বাচন হলে প্রশাসনিক দক্ষতা ও কার্যক্ষমতাও অনেকাংশে বাড়বে। লোকসভা বা বিধানসভা প্রতিটি নির্বাচনের সময় বহু সরকারি কর্মীকে কাজে লাগানো হয়। এতে প্রভাব পড়ে প্রশাসনিক কাজে। যদি এক সময়ে নির্বাচন হয়, তবে প্রশাসনিক কাজের প্রভাব কম পড়বে। অনেকটাই সময় বাঁচবে।

তৃতীয়ত, কেন্দ্র ও রাজ্য় সরকারের নীতি ও কর্মসূচির বাস্তবায়ন ও চালু রাখার ক্ষেত্রেও এই নীতি সাহায্য করবে। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই লাগু হয় আদর্শ আচরণ বিধি। এর ফলে ঘোষণা করা যায় না নতুন কোনও প্রকল্প। যদি এক সময় গোটা দেশে নির্বাচন হয়, তবে বিভিন্ন সময়ে নতুন প্রকল্প শুরু হওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা তৈরি হবে না।

চতুর্থত, বিলের সমর্থনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের দাবি, গোটা দেশে একসঙ্গে নির্বাচন হলে ভোটারদের মধ্যে তার ভালো প্রভাবই পড়বে। বাকিদের উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলে একসঙ্গে ভোট দিতে যাবে। এতে বাড়বে ভোটের হারও।

তবে এক দেশ এক নির্বাচনের বেশ কয়েকটি সমস্যাও রয়েছে। প্রথম প্রতিবন্ধকতাই হল সংবিধান সংশোধন। রাজ্য়ের বিধানসভা ও লোকসভার মেয়াদকে একই সময়ের মধ্যে বাঁধতে ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে বদল আনতে হবে সংবিধানেও। পাশাপাশি পরিবর্তন করতে হবে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং সংসদের কার্যপ্রণালীতেও ।

দ্বিতীয়ত এক দেশ এক নির্বাচনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলির সবথেকে বড় চিন্তা হল, তারা এই নিয়ম চালু আঞ্চলিক সমস্যাগুলিকে তুলে ধরতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় ইস্যুগুলিই প্রধান গুরুত্ব পাবে প্রচারে। নির্বাচনী পরিকল্পনাতেও সমস্যা তৈরি হবে। আঞ্চলিক দলগুলির পুঁজিও কম। তাই সেক্ষেত্রে জাতীয় স্তরের দলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচার বা খরচ করাও সম্ভব হবে না আঞ্চলিক দলগুলির পক্ষে।

তৃতীয়ত একই সময় রাজ্য় ও কেন্দ্রের ভোট হলে প্রভাবিত হতে পারেন ভোটাররা। এনিয়ে ২০১৫ সালে একটি সমীক্ষায় করা হয়েছিল। এই সমীক্ষায় দেখা যায়, একই সময়ে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হলে, ৭৭ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে যে ভোটাররা একই দলকে দুই নির্বাচনে সমর্থন করবে অর্থাৎ ভোট দেবে। তার বদলে যদি ছয় মাসের ব্যবধানে দুই নির্বাচন হয়, তবে ৬১ শতাংশ ভোটাররা বেছে নিতে পারে একটি দলকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − 1 =