মোদি-ই আসছেন ক্ষমতায়ঃ শাহ

চারদফার ভোট শেষ হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দাবি, মোদি-ই আসছেন ক্ষমতায়। এদিকে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ শিবির দাবি করেছে, তৃতীয়বারের জন্য আর কেন্দ্রে ফিরছে না নরেন্দ্র মোদির সরকার। এদিকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবারও বলেছেন, ‘মোদি সরকার আর আসছে না। ইন্ডিয়ার সরকারই আসবে।’ আর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। এই সরকারের মেয়াদ আর দু’সপ্তাহ। ৪ জুন ভারতবর্ষের বুকে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা হতে চলেছে।’

অন্যদিকে ভোট বিশ্লেষক যোগেন্দ্র যাদব থেকে শুরু করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের স্বামী পরাকালা প্রভাকরও গত কয়েকদিনের মধ্যে একাধিকবার বলেছেন, মোদির নেতৃত্বে এনডিএ আর কোনওভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। প্রভাকরের পূর্বাভাস, এনডিএ কোনওভাবেই ২৫৫-এর গণ্ডি পেরচ্ছে না। তবে পঞ্চম দফার ভোটের আগে শুক্রবার সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট জানান, তৃতীয়বারের জন্য সরকারে আসতে ম্যাজিক ফিগার ২৭২ না-পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।

শাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ৪ জুন ভোটের ফল প্রকাশের পরে যদি দেখা যায়, কোনওভাবে বিজেপি ২৭২-এর গণ্ডি পার করতে পারছে না, সেক্ষেত্রে কী হবে তা নিয়েই। প্রত্যুত্তরে শাহের জবাব, ‘প্ল্যান বি-র প্রয়োজন তখনই পড়ে, যখন প্ল্যান এ-র সাফল্যের সম্ভাবনা ৬০ শতাংশের কম হয়। তার দরকার পড়বে না। আমি নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী মোদিই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবেন।’ কেন তিনি এই ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী, তা ব্যাখ্যা করে শাহ বলেন, ‘আমি এমন কোনও সম্ভাবনা দেখছি না। ৬০ কোটির উপভোক্তার শক্তিশালী সেনা প্রধানমন্ত্রী মোদির পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাঁদের কোনও বয়স বা শ্রেণির বিভাজন নেই।’ এরপর তিনি বিস্তারিত পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, ‘আমরা ৪ কোটি গরিব মানুষকে আবাস প্রকল্পের সুবিধা দিয়েছি, আরও ৩ কোটি মানুষকে বাসস্থান দেওয়া হবে ভোট শেষ হওয়ার পর। ৩২ কোটি আয়ুষ্মান ভারত কার্ড দেওয়া হয়েছে। ১৪ কোটি বাড়িতে জল এনে দেওয়া হয়েছে, ১০ কোটি মানুষ এলপিজির সুবিধা পাচ্ছেন। ১২ কোটি বাড়িতে শৌচালয় তৈরি করে দিয়েছি। লাখপতি দিদি তৈরি করেছি, আরও ৩ কোটি মহিলাকে লাখপতি দিদি করার লক্ষ্য আমাদের। ১১ কোটি কৃষকের অ্যাকাউন্টে প্রতি বছরে ৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়। প্রতিটি গরিব পরিবারকে ৫ কেজি রেশন বিনামূল্যে দেওয়া হয়। স্বাধীনতার ৬০ বছর পরে এমন প্রধানমন্ত্রী এসেছেন, যিনি গরিব মানুষদের গণতন্ত্রের অংশ বানিয়েছেন। যাঁরা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন, তাঁরা জানেন নরেন্দ্র মোদি কী এবং কেন তাঁকে ৪০০ আসন দেওয়া উচিত।’

এদিকে বঙ্গের মাটি থেকে হুগলির ধনেখালির নির্বাচনী জনসভা থেকে অভিষেক পাল্টা বার্তা দিয়েছেন, ‘আমাদের শপথ নিতে হবে যারা ১০০ দিনের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে, যারা কালো কৃষি আইন এনে ৭০০ কৃষককে অত্যাচার করেছে, তাদেরকে যোগ্য জবাব দিতে হবে।’

এর আগে ভোট বিশ্লেষক যোগেন্দ্র যাদব তাঁর মতো করে বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করে বলেছিলেন, বিজেপি তথা এনডিএ জোট ২৬৮টি পর্যন্ত আসন পেতে পারে। আবার দিন দুয়েক আগে পরাকালা প্রভাকর বলেছেন, বিজেপি সব মিলিয়ে বড়জোর ২০০-২২০টি আসন পেতে পারে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার অঙ্ক থেকে পিছিয়েই থাকবে এনডিএ জোট। পরাকালার বিশ্লেষণ, এনডিএ ২৫৫ সিটের নিচেই থাকবে। শুধু তাই নয়, নরেন্দ্র মোদির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি এও বলেন, ‘প্রায় সব একনায়কেরই শেষটা একই রকম হয়ে থাকে-হয় হাতকড়ায় অথবা কফিনে।’ রাজ্য ধরে ধরে তাঁর বিশ্লেষণ, উত্তর ভারতে বিজেপি ৮০-৯৫টি এবং দক্ষিণ ভারতে ১৫টির মতো আসন হারাতে পারে। তাহলে ২০১৯-এ বিজেপি একাই যে ৩০৩টি আসনে জিতেছিল, তারমধ্যে অন্তত ১০২টির মতো হাতছাড়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে এনডিএ জোটের ক্ষমতায় আসার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − sixteen =