আরও বিস্ফোরক কুণাল, নির্বাচনী লড়াইয়ে সুদীপের থেকে এগিয়ে রাখলেন তাপসকে

আগে মুখপাত্রের পদ থেকে সরানো হয়েছিল কুণাল ঘোষকে। বুধবার সরানো হয় রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও। যা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এরইমধ্যে তাপস রায় ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কাজের নিরিখে এগিয়ে দিলেন প্রাক্তন সতীর্থকেই। কুণাল স্পষ্ট ভাষাতেই জানান, ‘মাঠে নেমে কর্মীদের জন্য কাজ করা, পাশে থাকা নেতা হলেন তাপস রায়। আর সুদীপদা পুরনো দিনের অভিজ্ঞ মানুষ। উনি জানেন কোথায় কাকে টুপি খাইয়ে ঠিক ভোটের সময় কী বের করে নিতে হয়।’

একইসঙ্গে কুণাল এও বলেন, ‘তাপসদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সুদীপদার সঙ্গেও সম্পর্ক খুব ভাল। সুদীপদা তো মাঝে দল ছেড়ে চলে গিয়ে নির্দলে দাঁড়ান তৃণমূলকে হারাতে। ২০০৪ সালের ঘটনা। নিজেই হেরে গিয়েছিলেন। এরপর ২০০৯ সালে সুদীপদার ফিরে আসা আমার হাত ধরে। আমি মমতাদিকে বলে দিল্লিতে সুদীপদাকে নিয়ে গিয়ে ওনার ফেরার পথ প্রশস্ত করি।’ এরই পাশাপাশি কুণাল এও দাবি করেন, সুদীপ লোকসভার সাংসদ হয়েও এলাকার লোকের পাশে থাকেননি। সে কারণে রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ থাকাকালীন তাঁর কাছে এসে লোকেরা সই করাতেন। এরই রেশ ধরে কুণাল সুদীপকে বিদ্ধ করে বলেন, ‘উনি মমতাদির ছায়ায় শুধু দাঁড়াবেন, জিতবেন, দিল্লিতে গিয়ে বসে থাকবেন। এটা তো কাজের কথা নয়।’

এই প্রেক্ষিতেই তাপস রায় প্রসঙ্গে কুণালের বক্তব্য, ‘কয়েকদিনের জন্য উত্তর কলকাতার সভাপতি হতেই তাপসদা হইহই ফেলে দিয়েছিলেন। সংগঠনটা চাঙ্গা হয়ে গিয়েছিল। তাপস রায় একটা জেলা অফিস করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। নজরুল মঞ্চের মিটিং থেকে মমতাদি আচমকা বললেন উত্তর কলকাতায় আবার সুদীপদাকে প্রেসিডেন্ট করে দিলাম। রোজ উনি চাইছেন।’ তবে এই প্রসঙ্গে কুণাল এদিন এও বলেন, ‘দলটা মমতাদির। তবে তাপসদাকে দেওয়ারই কী দরকার ছিল আর সরিয়ে অপমান করারই কী ছিল? সব জায়গায় কী বার্তা গেল, দিনের শেষে রাতে যে প্যান প্যান করতে পারবে, তারই প্রাপ্তিযোগ আছে। সাধারণ কর্মীদের ভ্যালু নেই।’

প্রসঙ্গত, রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণ করার পর কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, ‘যাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা মহানুভব। ঈশ্বর তাঁদের মঙ্গল করুক।’ বৃহস্পতিবার সকালে এ কথা বলেছিলেন কুণাল। এরপর সন্ধ্যায় সেই কুণাল একেবারে নাম করেই বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যে ব্যবস্থাটাই হোক বা যে চিঠিই দেওয়া হোক তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে তাঁদের সম্মতিতে, অনুমোদনে বা নির্দেশে হয়েছে।’

ভোটের তারকা প্রচারকের তালিকা থেকেও ছেঁটে ফেলা প্রসঙ্গে এদিন কুণাল জানান, ‘স্টার বক্তার কাজ কী? দলকে ডিফেন্ড করা। হয়ত ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি হাইট হতে হয়, আমি ৫ ফুট ৩। নানা গুণ দরকার, সেগুলি আমার নেই। তবে এটা জানি, উন্নয়ন নিয়ে বলার থেকে বিরোধীদের নাম করে বলাটা কঠিন। আর এসব স্টার তালিকা আমি ধরি না। আমি এমনভাবে রাজনীতি করতে চাই, আমাকে দলের কর্মীরা জেলায় ঘুরলে এক বাক্যে এসে বলবে, দাদা আপনি যেভাবে জবাব দেন, আর কেউ দেয় না। এটাই আমার পাওনা।’

গত একদিনে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক বিষয়ে কার্যত বোমা ফাটিয়েছেন কুণাল ঘোষ। এরপর বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি যা বলেছেন তা দলের ভালোর জন্যই। কর্মীদের মধ্যে দুঃখ তৈরি হয়, যদি তারা দেখে যারা নেতাদের কাছাকাছি থাকে, যারা মাঝরাত্রে হোয়াটসঅ্যাপে তেল মারতে পারে, যাদের টাকা পয়সা আছে উপহার দেওয়ার ক্ষমতা আছে তারা সব পেয়ে যাবে। আর দেওয়াল লেখা, মিছিল করা, বিভিন্ন পেশায় তৃণমূলকে ডিফেন্ড করারা বাদ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × two =