ক্রমাগত গণ আন্দোলনের অভিঘাতের মুখে পড়ে সোমবারই পদত্যাগ করে নিরাপত্তার খাতিরে দেশ ছেড়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই প্রসঙ্গে তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় জানিয়েছেন, রাজনীতির ময়দান থেকে তাঁর মায়ের অবসর গ্রহণের কথা ছিল। সেই সঙ্গে জয় এ-ও জানান যে, বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি, তা নিয়ে বেশ হতাশ ছিলেন হাসিনা। তিনি আর বাংলাদেশে ফিরে যেতে চান না। একইসঙ্গে তিনি এও জানিয়েছেন, গত রবিবার থেকেই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ভেবে রেখেছিলেন মুজিব-কন্যা হাসিনা। সোমবারেই তা ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু পথে থাকা আন্দোলনকারীদের জন্য আর সেটা করার সময় পাননি তাঁর মা।
এখানেই শেষ নয়, আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার জন্য যে শক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্তের পক্ষ নিয়ে জয় আরও জানান যে, শুধুমাত্র গতকালই ১৩ জন পুলিশকর্মীকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। সেখানেই জয়ের প্রশ্ন, ‘তাহলে উন্মত্ত জনতা যখন পিটিয়ে মারছে, তখন পুলিশের কী করা উচিত?’ পাশাপাশি জয় এও বলেছেন, হাসিনা তো বাংলাদেশের ভোল বদলে দিয়েছিলেন। যখন তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন, তখন তো বাংলাদেশের অবস্থা একেবারেই ভাল ছিল না। দরিদ্র দেশ ছিল। আর আজকের দিনে এশিয়ার উদীয়মান এবং প্রগতিশীল দেশগুলির মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। তবে সেনার দিক থেকে তাঁর মায়ের উপর কোনওরকম চাপ আসেনি বলেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন জয়। সেই সঙ্গে এই পরিস্থিতিতে হাসিনার পাশে দাঁড়ানোর জন্য ভারত সরকারকেও ধন্যবাদ জানান। আর বলেন যে, তাঁর মায়ের শরীর এখন ভাল আছে। আর তিনি পূর্ণ উদ্যমেই রয়েছেন।
তবে হাসিনা-পুত্রের অভিযোগ, মৌলবাদীর মোড়কে থাকা বিদেশি শক্তি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
কিন্তু দেশ ছেড়ে কোথায় গেলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা? এক সূত্র মারফত জানা গিয়েছে যে, তীব্র আন্দোলনের সম্মুখীন হয়ে দেশ ছেড়ে সোমবার ভারতে এসেছেন তিনি। তৃতীয় কোনও দেশ তাঁকে রাজনৈতিক আশ্রয় না দেওয়া পর্যন্ত আপাতত ভারতেই থাকবেন। প্রসঙ্গত বিগত প্রায় এক মাস ধরে চলছিল সরকার-বিরোধী তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন। এদিকে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েই শেখ হাসিনা তাঁর বোন রেহানাকে নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন। তাঁরা ব্রিটেনে নিতে আশ্রয় চেয়েছিলেন তাঁরা। এমনকী রেহানা আবার ব্রিটেনেরই নাগরিক। কিন্তু সূত্রের খবর, হাসিনার এই রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ব্রিটেনের তরফে নিশ্চিত করে কিছুই জানানো হয়নি।
আসলে সরকারি চাকরিতে বিতর্কিত কোটা ব্যবস্থা নির্মূল করার দাবি জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের ছাত্রদল। সেখান থেকেই প্রতিবাদ, আন্দোলন এবং হিংসার সূত্রপাত। শুধু তা-ই নয়, এই আন্দোলন হাসিনাকে গদিচ্যুত করার আন্দোলনের দিকেই এগোয়। শুধু রবিবারেই দেশে একাধিক সংঘর্ষের জেরে বলি হয়েছেন শতাধিক মানুষ।