শীতে খাবারে অবশ্যই রাখুন গুড়

শীত ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আমাদের শরীর উষ্ণতা এবং পুষ্টি কামনা করে। আর এই শীতে সুস্থ থাকার অন্যতম রক্ষাকবচ হল গুড়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শীতে চিনির বিকল্প হিসাবে কাজ করে গুড়। পায়েস কিংবা পিঠেপুলি, গুড় দিলে অন্য রকম স্বাদ হয়। ঐতিহ্যগতভাবে ভারতীয় পরিবারগুলিতে ব্যবহৃত, গুড় শুধুমাত্র একটি মিষ্টির উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাই নয় বরং এটি পুষ্টির একটি পাওয়ার হাউস বলেও জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদরা। একইসঙ্গে এটিকে শীতকালীন সুস্থতার ক্ষেত্রে এক সুপারফুড হিসেবেও কাজ করে। এছাড়াও গুড়ের নানা উপকারিতা রয়েছে। যেমন,

ন্যাচারাল বডি পিউরিফায়ার

গুড় একটি প্রাকৃতিক বডি ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে কারণ এটি আমাদের সিস্টেম থেকে টক্সিন অপসারণ করে। একইসঙ্গে এটি হজমে সাহায্য করে এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে। শীতকালে যখন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন হয় তখন গুড় হয়ে ওঠে অপরিহার্য। নিয়মিত গুড় খেলে রক্ত বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। সঙ্গে রক্তঅক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে।

জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি

শীতকালে জয়েন্টে ব্যথা বা জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়ার সাথে অনেকেই লড়াই করতে দেখা যায়। সেখানে গুড় কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারে বলেই জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা। একইসঙ্গে তাঁরা এও জানাচ্ছেন, আদার সাথে মেশানো হলে, গুড় প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথা উপশম করতে একটি কার্যকর প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। গুড় বিশেষভাবে উপকার দেয় যদি উষ্ণ দুধের সাথে খাওয়া হয়। কারণ এতে সামগ্রিক জয়েন্টের স্বাস্থ্যকে বাড়িয়ে তোলে এবং আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।

শীতকালীন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা

গুড়ের আরেকটি সুবিধা হল ফ্লুএর মতো উপসর্গগুলি উপশম করার ক্ষমতা। গরম জলের সাথে গুড় মেশানো গলা ব্যথা বা শ্বাসযন্ত্রের প্যাসেজে জ্বালা প্রশমিত করতে সাহায্য করতে পারে। গুড় নিয়মিত খেলে শরীরকে উষ্ণ রাখতে এবং সাধারণ ঠাণ্ডার উপসর্গগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। যে কারণে অনেকেই শীতকালীন  রুটিনেএকটিঅপরিহার্যসংযোজনহিসেবেরাখেন।

ত্বকের গুণমানের উন্নতি

শীতের মাসগুলি ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। সঙ্গে দেখা দেয় জ্বালাপোড়া ভাবও। এর থেকে মুক্তি দিতে পারে গুড়। কারণ, গুড়ের মধ্যে রয়েছে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, যা রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য বাড়ায়। এটি শুধুমাত্র ত্বকের অসম্পূর্ণতা নিরাময়ে সাহায্য করে না বরং সামগ্রিক ত্বকের গুণমানকেও সমর্থন করে। এটিকে প্রাকৃতিক তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে শীতের সময়ে ত্বক হাইড্রেটেড এবং স্বাস্থ্যকর রাখবে। ফলে ত্বকের শুষ্ক ও জ্বালাপোড়া থেকে মিলবে মুক্তি।

ইমিউনিটি বুস্টার

ডায়েটে গুড় অন্তর্ভুক্ত করার সবচেয়ে বড় কারণগুলির মধ্যে একটি হল এর সমৃদ্ধ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সামগ্রী। সেলেনিয়াম এবং জিঙ্কের মতো খনিজ পদার্থে ভরপুর, গুড় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। শীতকালে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যখন আমাদের শরীর বিভিন্ন অসুস্থতার জন্য সংবেদনশীল। গুড়ের সাথে পরিশোধিত শর্করা প্রতিস্থাপন করা নিশ্চিত করে যে আপনি খালি ক্যালোরি ছাড়াই পুষ্টিসমৃদ্ধ সুইটনার গ্রহণ করেন, যা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে আরও সুন্দর ও সবল রাখে।

এর পাশাপাশি আরও গুণ আছে গুড়ের।তাছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও চিনির বদলে গুড় খান অনেকে।তবে শুধু খাবারের স্বাদ আনা কিংবা ওজন ধরে রাখা গু়ড়ের একমাত্র কাজ নয়।গুড় সত্যিই শীতে বাড়তি খেয়াল রাখে শরীরের।গুড় চা কিন্তু বেশ উপকারী।চায়ে চিনির বদলে গুড় দিয়ে খেলে বেশ কিছু সুফল মেলে।

হজমশক্তি উন্নত করা থেকে, প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও কাজে আসে গুড়ের চা। আর গুড় চায়ের সঙ্গে যদি খানিকটা আদা মিশিয়ে দিতে পারেন, তাহলে সংক্রমণ এবং অ্যালার্জির সমস্যাও দূরে থাকবে। এছাড়াও শীতে যাঁরা শ্বাস কষ্টে ভোগেন তাঁদের নিয়মিত শরীরচর্চার পাশাপাশি শ্বাসকষ্টের সমস্যা সমাধানে গুড়ের ভূমিকা কম নয়। কারণ, গুড় শ্বাসযন্ত্র পরিষ্কার রাখে। সর্দিকাশি থেকেও রক্ষা করে গুড়। ঠাণ্ডা লাগলে ঘন ঘন চা খেতে ইচ্ছা করে। প্রতি কাপে যদি একটু করে গুড় মিশিয়ে নেন, তা হলে সুস্থ থাকা সহজ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + 8 =