আমার পদবি রায়, সাভারকর নয়, বিস্ফোরক উক্তি ব্যবসায়ী কৌস্তুভের

‘আমার পদবি রায়, সাভারকর নয়’, জোকা ইএসআই থেকে বেরনোর সময় এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করতে শোনা যায় ব্যবসায়ী এবং এক বেসরকারি চ্যানেলের সম্পাদক কৌস্তুভ রায়কে। শনিবার দ্বিতীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যায় ইডি। সেখান থেকে বেরনোর সময় কৌস্তুভ বলেন, ‘আমাকে ভয় দেখিয়ে, হেনস্থা করে কোনও লাভ নেই।’ ইন্ডিয়া জিতবে, এনডিএ হারবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এদিন সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরনোর সময় কৌস্তুভ এও বলেন, ‘তদন্তের নামে প্রহসন হচ্ছে। সারাদিন শুয়ে আছি এবং ঘুমোচ্ছি। কোনও কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। যা হচ্ছে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।’ প্রসঙ্গত, একটি চিটফান্ড মামলায় আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে কৌস্তুভ রায়কে সোমবার মাঝরাতে গ্রেফতার করে ইডি। মঙ্গলবার তাঁকে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে হাজির করানো হয়। তিনি নিজেই সওয়াল করেন। আদালত কলকাতা টিভির সম্পাদককে দশ দিন ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। একদিন অন্তর তাঁকে মেডিক্যাল চেকআপ করাতে হবে বলেও আদালত জানিয়েছে। সঙ্গে এও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দুদিন অন্তর তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। আদালত সূত্রে খবর, পরবর্তী হাজিরা ২৮ জুলাই।

জেলবন্দি অবস্থাতেই চিটফান্ড সংস্থা পিনকনের কর্তা মনোরঞ্জন অভিযোগ করেন, কৌস্তুভ রায় তাঁকে প্রতারণা করেছেন। ইডির দাবি, মনোরঞ্জনকে শাসকদলের নাম করে হুমকি দিয়েছেন কৌস্তুভ। এরপরই প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং আইনে তাঁকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার শুনানিতে ইডির আইনজীবী জানান, মনোরঞ্জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কৌস্তুভের নাম পাওয়া যায়। নগদে ৬৫ লক্ষ টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে। আর এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করা হয়েছে। আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। তাছাড়া আরও কিছু তথ্য মিলেছে। তারও তদন্ত হওয়া দরকার।

সওয়াল করতে গিয়ে কৌস্তুভ জানান, ‘এই আদালতে আমার আর একটি মামলা রয়েছে। ২০১৯ সালের একটি মামলায় আমাকে হেনস্তা করা হয়েছিল। সে ব্যাপারে আমি এই আদালত থেকেই রক্ষাকবচ পাই। আদালতের নির্দেশেই আমি হাজিরা দিয়েছি। হাইকোর্টে ইডি জামিন বাতিলের আবেদন করে। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। তারপরেও আমার অফিসে টানা ৮০ ঘণ্টা তল্লাশি চালায় আয়কর দফতর। হাইকোর্টে গেলে তারা কড়া পদক্ষেপ করে। আদালত আমার পক্ষে নির্দেশ দেয়।‘

এর পাশাপাশি কৌস্তুভের সংযোজন, ‘পিনকনের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ অর্থ নেওয়া হয়েছিল। সব সংবাদমাধ্যমই বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থ নেয়।‘ সঙ্গে এও জানান, পিনকনের লেজারে অসংগতি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত সংস্থা পিনকন। তারা যে চিটফান্ড, তা আমি কী করে জানব। তিনি জানান, মনোরঞ্জন এবং তাঁর স্ত্রী জেলে যাওয়ার পর আমি তাঁদের সাহায্য করার জন্য ৪৪ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। মনোরঞ্জন জেলে যাওয়ার পর আমি জিএসটি বিল আপলোড করি অগাস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে। তা ওদের লেজারে নেই।’ এদিকে পিনকন সংস্থার কর্তা ২০০ কোটি টাকা প্রতারণার যে অভিযোগ এনেছেন সেই প্রসঙ্গে  কৌস্তুভ জানান, ‘ওই টাকা আমি মিটিয়ে দিয়েছি। সেই মামলায় আমার জামিন হয় ২০১৯ সালে। ২০২১ সালে ইডি আবার আমায় ডেকে পাঠায়। ১২ ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পর আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমি আদালতে ইডির বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগে মামলা করি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, আমাকে আর গ্রেফতার করা যাবে না। এরপর ইডি বলে, সপ্তাহে চারদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমাকে হাজিরা দিতে হবে। ইতিমধ্যে আদালতে ফের মামলা হয়। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। তারও পরে গত বছরের অগাস্ট মাসে আমার অফিসে আয়কর হানা হয়। তা নিয়েও মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তার মধ্যেই আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − 8 =