শহরে এক চিকিৎসকের রহস্যমৃত্যু। বিদেশি বান্ধবীর বহুতলের নীচ থেকে দেহ উদ্ধার। প্রগতি ময়দান থানা এলাকার ঘটনা। জানা গিয়েছে, ওই বহুতলেই থাকেন চিকিৎসকের বান্ধবী। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত চিকিৎসকের নাম শুভঙ্কর চক্রবর্তী।এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানায়,মৃত শুভঙ্কর চক্রবর্তীর বান্ধবী তাইল্যান্ডের বাসিন্দা। একইসঙ্গে প্রগতি ময়দান থানায় ডেকে ঠিক কী ঘটনা ঘটেছে,তা শুভঙ্করবাবুর বান্ধবীর থেকে জানার চেষ্টাও করেন তদন্তকারীরা। কারণ, পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, সোমবার মাঝরাতে বহুতলের পাঁচ তলা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, সকালে বহুতলের নিরাপত্তারক্ষীরা বহুতলের নীচ থেকে দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, সোমবার মাঝরাতে ওই বহুতল থেকে পড়ে গিয়েছেন শুভঙ্কর। কিন্তু সেটা কীভাবে, তা নিয়ে সন্ধিহান তদন্তকারীরাও। আদৌ পড়ে গিয়েছেন,নাকি তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে,তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
জানা গিয়েছে,শুভঙ্কর পেশায় পেডিয়াট্রিক চিকিৎসক। বিদেশি বান্ধবীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ওই চিকিৎসক সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সক্রিয়। তাই এই মৃত্যুর পিছনে চিকিৎসকের কোনও মানসিক অবসাদ কাজ করছিল কিনা, আদৌ ঘটনার সময়ে ওই বান্ধবী ফ্ল্যাটে ছিলেন কি না,এই সব তদন্ত করে দেখার ব্যাপার রয়েছে বলেই জানানো হয় প্রগতি ময়দান থানার তরফ থেকে।
এরপরই তদন্তে নেমে জানা যায়, সোমবার রাত ১০টা নাগাদ ওই বহুতলে বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন চিকিৎসক। ওই বান্ধবীর বাড়িতে মদ্যপান করেন শুভঙ্কর। সেই সময় বাড়ি থেকে কয়েক বার ফোন পান চিকিৎসক। তার পরই বাড়ি ফিরবেন বলে মনস্থির করেন ওই চিকিৎসক। এরপর বাড়ি ফেরার সময় ওই চিকিৎসক দেখেন বহুতলের মূল দরজা তালাবন্ধ। তখনই বহুতলের কার্নিশ বেয়ে নামতে যান তিনি। সেই সময়ই পাঁচতলা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় ওই চিকিৎসকের। তবে বহুতল থেকে বেরোনোর জন্য তালা খুলতে কেন কেয়ারটেকারকে ডাকলেন না ওই চিকিৎসক আর কেনই বা তিনি কার্নিশ বেয়ে নামতে গেলেন তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রগতি ময়দান পুলিশের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে যে, ফেসবুকে তাইল্যান্ডের এক মহিলার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ওই চিকিৎসকের। সেই আলাপ বন্ধুত্বে গড়ায়। গত ২৩ মে নেপাল ঘুরে ভারতে আসেন চিকিৎসকের ওই বান্ধবী। তিনি তাইল্যান্ডের বাসিন্দা। এরপর থেকে প্রগতি ময়দান থানা এলাকার ওই বহুতলে ভাড়াটিয়া হিসাবে থাকছিলেন বান্ধবী। বহুতলে ছোট একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে বহুতলের কেয়ারটেকারের মা জানান,‘আমার মেয়ে-জামাই থাকে এখানে। মেয়ের কাছ থেকেই খবর পাই যে দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা কেয়ারটেকার হিসাবে থাকি। চিকিৎসক এবং তাঁর বান্ধবী, দু’জনেই থাকেন এখানে। বান্ধবী তাইল্যান্ডের।’ তিনি এও জানান,‘ওই চিকিৎসকের বাড়ি সল্টলেকে। আমরা ওঁদের স্বামী-স্ত্রী হিসাবে জানতাম। মাঝেমাঝে আসতেন এখানে। আজ জানতে পারলাম যে,ওই চিকিৎসকের স্ত্রী,সন্তান সল্টলেকের বাড়িতে থাকেন।’
প্রসঙ্গত,কিছুদিন আগেই কলকাতার অদূরে বারাকপুর ক্যান্টনমেন্টের সেনা ছাউনির ম্যান্ডেলা হাউস আবাসনে এক মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর সঙ্গী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। তবে এক্ষেত্রে তেমন কোনও অভিযোগ ওঠেনি।