অলোকেশ ভট্টাচার্য
ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে উত্তপ্ত নন্দীগ্রাম। গভীর রাতে রক্ত ঝরেছে সোনাচূড়ায়। প্রাণ গিয়েছে বিজেপি কর্মীর। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উত্তপ্ত তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত নন্দীগ্রাম। দোকানে-বাড়িতে ভাঙচুর, আগুন লাগানো হয়েছে। রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে চলে বিক্ষোভ। পরিস্থিতি সামাল দিতে নেমেছে বিশাল কেন্দ্রীয় বাহিনী। এর মধ্যেই কাঁথির জনসভা থেকে বদলার হুঁশিয়ারি দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এ দিকে, পরিস্থিতি আরও হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী নন্দীগ্রাম থানা থেকে পৌঁছায় গোটা এলাকায়। সঙ্গে যায় প্রচুর পুলিশও। জানা যাচ্ছে, ১০০ কোম্পানির উপর বাহিনী নন্দীগ্রামে মজুত রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে, শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘একজন মহিলাকে নন্দীগ্রামে খুন করা হয়েছে। আপনারা তো জানেন আমি গুন্ডা সোজা করা লোক। কেষ্ট মণ্ডল, শেখ শাহজাহানরা কোথায়? তাদের বদলা হবে। একজন মাঝ বয়সী মহিলাকে মেরে দিল তার বদলা হবে না?’
শুধু তাই নয়, এদিনের এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলে নন্দীগ্রামের আইসি-কে সাসপেন্ড করার দাবি তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রাম থানায় ঢুকে রীতিমতো দাপট দেখান শুভেন্দু। তাঁর অভিযোগ, আইসি ‘খুনি’দের সঙ্গে মিটিং করেছেন, তাঁকে ‘মজা দেখাবেন’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে দাবি তোলেন, অবিলম্বে সাসপেন্ড করা উচিত আইসিকে। এই মর্মে তিনি নন্দীগ্রাম থানায় আবেদনপত্রও লিখে আসেন। এদিকে, বিজেপি কর্মীর খুনের পরিপ্রেক্ষিতে নন্দীগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠাল বিজেপি। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মূল অভিযুক্ত হিসেবে দেবকুমার রায় নামে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকে আটক করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে ব্যানার ফেস্টুন লাগানো নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে ঝামেলা হয়। অভিযোগ ওঠে এই ঝামেলায় বিজেপি-র এক মহিলা সমর্থককে খুন করে তৃণমূল কর্মীরা। এলাকার বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, বুধবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্ররোচনামূলক মন্তব্যের পরই এই ঘটনা ঘটেছে। কারণ, অভিষেক বুধাবরই বলেছেন, ‘নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকে সোনাচূড়া, হরিপুর, গোকুলনগর, ভেকুটিয়া,আর দু’নম্বর ব্লকের বয়ালনগর ১, বয়াল ২ এই জায়গায় যাঁরা মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি তাঁদের তালিকা আমার কাছে রয়েছে। এর পরিণতি খুব খারাপ হবে সতর্ক করলাম। কোনও বাবা বাঁচাবে না। কেউ বাঁচাবে না।’ উল্টোদিকে তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের দাবি, এটা প্ররোচনামূলক বক্তব্য নয়। অভিষেকের বক্তব্য প্রসঙ্গে শেখ সুফিয়ান জানান, ‘তিনি কোনও প্ররোচনামূলক বক্তব্য রাখেননি। উনি প্রতিবাদ করতে বলেছেন। কোনও আক্রমণ করতে এলে প্রতিবাদ করো। কখনও বলেননি তুমি আক্রমণ করো। আর ওই অঞ্চল বিজেপির। ঝান্ডা বাঁধার লোক নেই। তৃণমূল মারামারি করতে যাবে? যিনি মারা গিয়েছেন তিনি সারাজীবন তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। এখন তৃণমূলকে ফাঁসানোর জন্য কৌশল।’