হাওড়ার বেলগাছিয়ায় ভাগাড় বিপর্যয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা জাতীয় পরিবেশ আদালতের

হাওড়ার বেলগাছিয়ার ভাগাড় এবং সংলগ্ন এলাকার বিপর্যয় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করল জাতীয় পরিবেশ আদালত। শুক্রবার মামলার প্রথম শুনানিতেই হাওড়া পুরসভা এবং রাজ্য প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন তুলে দেন এই বিপর্যয় নিয়ে। আগামী ২৩ মে’র মধ্যে হাওড়া পুরসভার কাছে ডাম্পিং গ্রাউন্ড বা ভাগার নিয়ে সর্বশেষ রিপোর্ট এবং অ্যাকশন টেকন রিপোর্ট তলব করল জাতীয় পরিবেশ আদালত।

আদালত সূত্রে খবর, এদিন আদালতে শুনানি পর্বে ভাগার বিপর্যয় এবং সংলগ্ন এলাকার ভূমি ধস ও বাড়িঘর ফাটল ধরার ছবি পেশ করা হয়। তা দেখেই রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতীয় পরিবেশ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত সূত্রে খবর, চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি হাওড়া পুরসভাকে ওই ভাগাড় অন্যত্র স্থানান্তর করার নির্দেশ দেয় পরিবেশ আদালতের বেঞ্চ। কিন্তু হাওড়ার বেলগাছিয়ার ভাগাড় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও সেই নির্দেশ কার্যকর করেনি হাওড়া পুরসভা। এবার এই ঘটনায় স্ট্যাটাস রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট।

এদিন শুনানির সময়, মধ্যেই ভাগাড়ের কারণে যে বিপর্যয় ঘটেছে তাতে প্রশাসন কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, কোন ধরনের তৎপরতা দেখিয়েছে তা নিয়ে যাবতীয় রিপোর্ট তলব করল পরিবেশ আদালত। সূত্রের খবর, ১০০ বিঘা জমির উপরে তৈরি এই ভাগাড়ের ভয়াবহ অবস্থা নিয়ে ১৯৯৫ সালে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়।

এরপর ২০০০ সালে কলকাতা হাইকোর্টেও সেই মামলা ফের চলতে থাকে। ২০০৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, অবিলম্বে ওই ভাগাড় অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে। তৎকালীন বাম প্রশাসনের তরফে আদালতে জানানো হয়, জায়গার সঙ্কট রয়েছে। পর্যাপ্ত জমি পাওয়া গেলেই ভাগাড় স্থানান্তর করা হবে। এরপর বাম সরকারের অবসান ঘটলে তৃণমূল প্রশাসন রাজ্যে ক্ষমতা এলে এই বিষয়টি ঠান্ডা ঘরে চলে যায় বলে পরিবেশ আদালত সূত্রে খবর।

এদিকে ২০১৬ সালে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন তৈরি হয়। এই আইন অনুযায়ী আদালতের তরফে হাওড়ার বেলগাছিয়ার বাগান নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনকে। কিন্তু সেখানেও জমির অজুহাত দিয়ে কোন কাজই করেনি প্রশাসন, আদালতেই উঠেছে এমন অভিযোগ। জট যখন আরও পাকছে সেই আবহে ২০২৪ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতে হাওড়ার ভাগাড় নিয়ে মামলা হয়।

হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড় নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই নানা জটিলতা তৈরি হয়। একদিকে ভাগাড়ের সমস্যা, অন্যদিকে পানীয় জলের সমস্যা, স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ি ধসে যাওয়া, বিদ্যুৎহীন এলাকা। সব মিলিয়ে জেরবার স্থানীয়রা। পুরমন্ত্রী ঘটনাস্থলে বিক্ষোভের মুখেও পড়েন ফিরহাদ।

এই আবহে বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে সেই জঞ্জাল সরানোর জন্য। বেলগাছিয়ার ভাগাড়ের পরিবর্তে আবর্জনা ফেলা হবে হুগলির বৈদ্যবাটিতে। সেখানে প্রায় আড়াইশো মেট্রিক টন আবর্জনাকে স্থানান্তরিত করা হবে বলে জানা গিয়েছে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই প্রসঙ্গে বলার পরই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বৈদ্যবাটি পুরসভা।

হাওড়ার বেলগাছিয়ার আবর্জনার স্তূপ অন্য় জায়গায় সরানোর পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন। সে ক্ষেত্রে প্রথমে বিকল্প হিসাবে ধরা হয়েছিল শিবপুরের আরুপাড়া এলাকায়। সেখানে নতুন ভাগাড় তৈরি করার কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু বিক্ষোভ দেখায় এলাকাবাসী। এদিকে, বেলগাছিয়ার ভাগাড়ের ধসে গোটা জেলার ময়লা নেওয়া বিঘ্নিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 5 =