‘সোশ্যাল মিডিয়ার সুদূরপ্রসারি প্রভাব সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সতর্ক হতে হবে’, একটি মামলার শুনানিতে এমনটাই জানাল সুপ্রিম কোর্ট। প্রসঙ্গত, তামিলনাড়ুর বিধায়ক এসভি শেখর ২০১৮ সালে একটি ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করেছিলেন। যেখানে এক মহিলা সাংবাদিকদের সম্পর্কে অপমানজনক বেশ কিছু কথা লেখা ছিল। সেই পোস্টের জন্য শেখরের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। এই মামলা খারিজের আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন শেখর। অভিনেতার আবেদন খারিজ করে বিচারপতি বি আর গভাই এবং বিচারপতি পি কে মিশ্রের বেঞ্চের বক্তব্য, ‘কেউ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে তার প্রভাব এবং ব্যপ্তি সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।’ শেখরের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, ঘটনার দিন তাঁর মক্কেল চোখে কিছু ওষুধ দিয়েছিলেন, ফলে পোস্টে কী লেখা আছে, তা পড়তে পারেননি, শুধু শেয়ার করেছিলেন। বিচারপতিদের পালটা বক্তব্য, ‘কেউ যদি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকে এতটা জরুরি বলে মনে করেন, তা হলে তার ফলাফল ভোগ করার জন্যও তৈরি থাকতে হবে।’ এর আগে পোস্ট সংক্রান্ত মামলা খারিজের আবেদন নিয়ে মাদ্রাজ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শেখর। ১৪ জুলাই সেই আবেদন খারিজ করে দেয় মাদ্রাজ হাইকোর্ট। হাইকোর্ট তাদের রায়ে জানায়, ‘২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল অভিনেতা যে ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করেছেন, তা অশ্লীল, অপমানজনক। এই নিয়ে চেন্নাইয়ের পুলিশ কমিশনারের কাছে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছিল।’ হাইকোর্টে দাঁড়িয়ে শেখরের আইনজীবীর দাবি ছিল, তাঁর মক্কেল পোস্টের কন্টেন্ট সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।
মেসেজটা পেয়ে কিছু না ভেবেই তিনি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ফরোয়ার্ড করে দিয়েছিলেন। পরে সেই পোস্ট ঘিরে বিতর্ক শুরু হলে ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যে পোস্টটি ডিলিট করে দেন তিনি। ২০১৮-এর ২০ এপ্রিল ওই পোস্টের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে চিঠিও আপলোড করেন। কিন্তু হাইকোর্টে এই যুক্তি গ্রাহ্য হয়নি।
হাইকোর্টের বক্তব্য ছিল, ‘যে মেসেজটি ফরোয়ার্ড করা হয়েছিল, সেখানে মহিলা সাংবাদিকদের সম্পর্ক এতটাই অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়েছে, তা উচ্চারণ করতেও সঙ্কোচ বোধ করছে আদালত। এ ধরনের মেসেজ তামিলনাড়ুর পুরো সংবাদমাধ্যমের অপমান। আমরা এমন একটা যুগে বাস করছি, যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া সকলের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফরোয়ার্ড বা পোস্ট করা কোনও মেসেজ মুহূর্তে বিশ্বের সব প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে। আবেদনকারীর যা জনপ্রিয়তা, তার নিরিখে মেসেজ ফরোয়ার্ডের ক্ষেত্রে তাঁর সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজ পোস্ট বা ফরোয়ার্ড করা ধনুক থেকে বেরিয়ে যাওয়া তিরের মতো, যা আর ফেরানোর উপায় নেই।’ এরপরই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন তামিলনাড়ুর এই বিধায়ক।