কালীঘাটের বাড়িতে নূর গিয়েছিলেন মমতাকে সুরক্ষা দিতে, এমনটাই সামনে এল জিজ্ঞাসাবাদে

কালীঘাটের বাড়িতে কেন যেতে চেয়েছিলেন নূর আমিন তা স্পষ্ট হল দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর। কালীঘাটের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির গলির সামনে থেকে অস্ত্র-সহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে নূর আমিন নামে এক যুবক। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ পর্বের পর শেষে গ্রেফতার করা হয় তাকে। তবে শুক্রবারও স্পষ্ট হচ্ছিল না নূর আমিন ঠিক কেন গিয়েছিলেন কালীঘাটে। অবশেষে তিনি জানালেন মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই যাওয়া তাঁর। তাঁকে সুরক্ষা দেওয়াই ছিল নূর আমিনের লক্ষ্য। তবে একইসঙ্গে নূরকে জেরায় নাম উঠে এল এক তরুণীরও। পাশাপাশি লালবাজার সূত্রে খবর, ধৃতের গাড়িতে আরও অস্ত্রের হদিশও মিলেছে।

পাশাপাশি নূর আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃতের পুলিশ হওয়ার খুব ইচ্ছে। নিজেকে একজন পুলিশ আধিকারিক হিসাবে ভাবতে ভালবাসেন তিনি। অনেক দিন ধরেই নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে এলাকায় ঘুরতেন নূর। গাড়িতেও তাই পুলিশের স্টিকার লাগানো ছিল। এমনকী পুলিশের বোর্ড লাগিয়ে টোল ফাঁকি দিতেও নাকি সিদ্ধহস্ত নূর, এ তথ্যও পুলিশি জেরাতেই উঠে এসেছে। সঙ্গে এও জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও বিপদ হতে পারে তিনি ভেবেছিলেন। সেই কারণেই সুরক্ষা দিতে গিয়েছিলেন বলে পুলিশকে জানান তিনি। তবে শুধু ভোজালি বা পিস্তলই নয়, পরে দেখা গিয়েছে নূরের গাড়িতে রয়েছে ১৫ ইঞ্চির ধারাল অস্ত্রও। গাড়ির ফ্লোর ম্যাটের তলা থেকে সেটি পাওয়া মেলে। পুলিশের দাবি, ছিল বেসবলের ব্যাটও।

এদিকে লালবাজার সূত্রে শুক্রবারই খবর মেলে, নূরের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারাল অস্ত্র ও গাঁজা ছিল। এছাড়াও কলকে ঠাসা গাঁজা ছিল নূরের কাছে। সঙ্গে গাড়ির ভিতর থেকে মেলে দুটি টুপি। একটিতে লেখা আইপিএস। অন্যটিতে লেখা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। রাজ্য পুলিশের একটি স্টিকারও পাওয়া গিয়েছে। মিলেছে একটি কালো রঙের বেল্টও।

এছাড়া নূরের গাড়ি থেকে কিছু সচিত্র পরিচয়পত্রও পাওয়া গিয়েছে। সেটির মধ্যে একটিতে লেখা ডিজি, বিএসএফ (জি)। অন্য একটি পুলিশের পরিচয়পত্র। পুলিশের ভুয়ো পরিচয়পত্র পাওয়া যাওয়ার বিষয়টিও শুক্রবারই জানিয়েছিলেন কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল। এরপর জানা যায়, আইডেন্টিটি কার্ড বানানেও রয়েছে ভুল। নূরের মোবাইলের বিভিন্ন তথ্যই খতিয়ে দেখছেন পুলিশকর্মীরা। সেখানেও পুলিশের পোশাক পরা ছবি পাওয়া গিয়েছে।

ধৃত নূর আদতে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার বাসিন্দা। তবে নূরের থেকে যে আধার কার্ড পাওয়া গিয়েছে, সেখানে ঠিকানা লেখা আছে পশ্চিম মেদিনীপুরের আলিগঞ্জ। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ঠিকানা হল নূরের শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা। আনন্দপুরের মার্টিন পাড়ায় ইন্টেরিয়রের দোকানও রয়েছে নূরের।

এদিকে নূরের স্ত্রীর দাবি, সে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। ওই বন্দুক একটি লাইটার বলেও দাবি করেন তার স্ত্রী। এদিকে এই নুরের ফেসবুক প্রোফাইলে উঁকি দিয়ে উঠে এল নয়া তথ্য। ফেসবুক প্রোফাইল অনুযায়ী, ‘ফ্যামেলি ম্যান’ নুর। প্রোফাইলে ভর্তি তাঁর খুদের ছবি। ‘অ্যাবাউট’-এ নুর লিখেছেন, ‘হিউম্যান রাইটস প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশন’এর সঙ্গে সে যুক্ত। এছাড়াও নূর ইন্টেরিয়র-এর সঙ্গেও যুক্ত। এছা়ড়াও এই প্রোফাইলটিতে নূরের একগুচ্ছ ছবি রয়েছে। কখনও জিম করতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে, আবার কখনও কেদারনাথ দর্শনে গিয়েছে সে। যদিও প্রোফাইলটি আদতে নূর চালাতেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে অনেকের।

এদিকে ২০ জুলাই তাৎপর্যপূর্ণ একটি পোস্ট শেয়ার করেন নূর। সেখানে ক্যাপশানে লেখা ‘২১.০৭.২৩’। ‘অপরিচিত’ ছবির একটি লিঙ্ক সেখানে পোস্ট করা। উল্লেখ্য, দ্বৈত সত্ত্বা বা স্প্লিট পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার নিয়ে তৈরি এই ছবিটি। ২৬ তারিখের একটি পোস্টে কেন ২৭ তারিখের ক্যাপশান? সেক্ষেত্রে কি কোনও বার্তা দিতে চেয়েছিলেন নূর?

গত ১১ জুলাই অপর একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভিডিয়ো শেয়ার করে নুর। যেখানে দেদার ছাপ্পার একটি ভিডিয়ো দেখা যায়। এক মহিলা কণ্ঠকে বলতেও শোনা যায়, ‘এইভাবে ছাপ্পা দিও না।’ ভিডিয়োটি শেয়ার করে নূর এও লিখেছেন, ‘এটা ভোট না মির্জাপুর সিরিজ।’ তবে ঠিক কোন উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে হাজির হয়েছিল নুর? তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে সব দিকগুলি।

এদিকে অভিযুক্ত ওই যুবকের গাড়িতে এক মানবাধিকার সংগঠনের স্টিকারও সাঁটানো ছিল।

এদিকে শুক্রবারের ঘটনায় বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দাবি করেন, ওই ঘটনার জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং ওসি কালীঘাটকে সাসপেন্ড করা প্রয়োজন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − 2 =