যে ব্রিগ্রেডে কয়েকদিন আগেই লক্ষ কণ্ঠে গীতপাঠ হয়ে গেল, সেই ব্রিগেড ভাসতে চলেছে লাল ঢেউয়ে। ডিওয়াইএফআইয়ের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা দিবস ছিল ৩ নভেম্বর। সেদিনই শুরু হয়েছিল নয়া অভিযানের। তারপর কেটেছে ২ মাস। সকলের জন্য কাজের দাবি, রাজ্যে শিল্পায়ন, দুর্নীতির মতো বিষয় নিয়ে জোরালো আওয়াজ তুলে গোটা রাজ্য ঘুরে হাঁটতে হাঁটতে বাম যুবকর্মীরা আগামী ৭ জানুয়ারি পৌঁছবেন কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে। শাসকের বিরোধিতায় সুর চড়াতে চলেছে কাস্তে-হাতুড়ি-তারারা।ফিরবে জ্যোতি-বুদ্ধ জমানার চেনা ছবিটা, আত্মবিশ্বাসী লাল শিবির। আর সেই কারণেই আগামী ৭ জানুয়ারি তাঁরা সবাই পায়ে পা মিলিয়ে পৌঁছাবেন কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে। সোজা কথায় ইনসাফ যাত্রা থেকেই লোকসভা ভোটের আগে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন যেন আরও বেশি করে দেখতে চাইছে আলিমুদ্দিন। যৌবনের ডাকে সাড়া দিয়েই ব্রিগেড ভরাবে মানুষ, প্রত্যয়ী সেলিম থেকে বিমানরা। আর এই অভিযানে মুখ একটাই, ক্যাপ্টেনও একজনই, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।
শেষ বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দাপুটে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে দাঁড়িছিলেন এই মীনাক্ষীই। যদিও মাত্র ৬ হাজারের কিছু ভোট পেয়ে ক্ষান্ত থাকতে হয় তাঁকে। কণ্ঠে মেঠো টান, উঠে আসা খুবই সাধারণ পরিবার থেকে। সর্বদাই আদ্যন্ত সাধারণ, ছিমছাম পোশাকেই ঘুরে বেড়ান এই জেলা থেকে সেই জেলা, তাঁকেই আগামীর মুখ করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে বঙ্গ সিপিএম। জেলা থেকে কলকাতা, ব্রিগেড চলোর পোস্টারে, বিশাল বিশাল সব কাটআউটে এখন একটাই মুখ, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। যা দেখে অনেক ‘বামমনস্ক’ মানুষই খোঁচা দিয়ে বলছেন সিপিএম আবার ‘ব্যক্তিপুজো’ শুরু করল কবে? যদিও সেসবে পাত্তা দিতে নারাজ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তাঁর সাফ দাবি, প্রজেক্ট মীনাক্ষী নয়, ক্যাপ্টেন মীনাক্ষী। ওই তো আসল ক্যাপ্টেন এখন। প্রচার তো হবেই। শ্রমজীবী মানুষ, কৃষিজীবী মানুষ, অংসগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক সকলেরই ন্যায় বিচারের স্বার্থে ইনসাফ যাত্রার শেষে ইনসাফ চাইতে ব্রিগেডে যাওয়া উচিত বলেই মনে করছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান।
একই সঙ্গে বিমানের সংযোজন, ‘একজন ইয়ং লেডি সে ডিওয়াইএফআইয়ের সেক্রেটারি হয়েছে। পুরুষদের মতোই সে এগিয়ে যাচ্ছে। সমস্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে। আগেকার দিনে স্বাধীনতার সময়ে একটু ডাকাবুকোদের তো ক্যাপ্টেন বলে সম্বোধন করত মানুষ। তাই তো ক্যাপ্টেনের প্রচার হচ্ছে। আগে তো ডিওয়াইএফআইয়ের কোনও মহিলা সেক্রেটারি ছিল না। সে কারণেই হয়তো এখন প্রচার বেশি হচ্ছে।’
তবে প্রশ্ন উঠেছে কাটআউট নির্ভর রাজনীতি নিয়ে। কারণ, এই ঘটনা আগে দেখা যায়নি কমিউনিস্ট পার্টিতে। আর এখানেই শুরু হয়েছে জল্পনা। উঠেছে প্রস্ন. তবে কি তবে কি প্রচারের চিন্তাভাবনাতেও এবার বদল আনছে সিপিএম কি না তা নিয়েও। তবে এই প্রসঙ্গে বিমান বসুর বক্তব্য, ‘ইলা মিত্র যখন আক্রান্ত হয়েছিল। তখন ইলা মিত্রকে নিয়েই ব্যাপারটা হয়েছে। সেটা দেশভাগ হওয়ার পর। যে কারণে গোলাম কুদ্দুসকে লিখতে হয়েছিল স্তালিন নন্দিনী ফুচিকের বোন ইলা মিত্র। কাজেও এটা একটু আলাদ হয়ে গেল। আগামীদিনে মীনাক্ষী সামগ্রিক লড়াই সংগ্রামের মুখ তো বটেই।’