২৬/১১-র হামলায় জড়িত ছিল পাকিস্তান, স্বীকার তাহাউর রানার

মুম্বই জঙ্গি হামলায় পাকিস্তান ও আইএসআই জড়িত এই অভিযোগ বারবার তোলা হয়েছে ভারতের তরফ থেকে। আর এই দাবি যে ভিত্তিহীন ছিল না, তার প্রমাণ মিলল তাহাউর রানার বক্তব্যে ৷ এনআইএএর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, ওই হামলায় পাকিস্তানের শীর্ষ সেনাকর্তারা এবং আইএসআই জড়িত ছিল ৷ ফলে এই জঙ্গি হামলা নিয়ে ভারতের তরফ থেকে এতদিন যে দাবি কারা হয়েছে তাতে সিলমোহর দিল তাহাউর রানার এই স্বীকারোক্তি।

প্রসঙ্গত, মুম্বই জঙ্গি হামলার অন্যতম প্রধান মাস্টারমাইন্ড তাহাউর রানা ৷ তাঁকে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে  নিয়ে আসে ভারত ৷ এখন তিনি রয়েছেন ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিভ এজেন্সি বা এনআইএর হেফাজতে৷ তাঁকে রাখা হয়েছে তিহাড় জেলে৷ সেখানেই তাঁকে জেরা করেন মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের তদন্তকারী আধিকারিকরাআর এই জেরাতেই মুম্বই হামলার সঙ্গে পাকিস্তান ও আইএসআইএর যোগ থাকার বিষয়টি জানিয়েছেন তাহাউর৷ তদন্তকারীদের রানা এও জানান, তিনি একসময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন বিশ্বস্ত এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন তাঁকে সৌদি আরবে একটি গোপন মিশনেও পাঠানো হয়েছিল যদিও এনআইএর কাছেও এই বিষয়টি আগেই স্বীকার করেছিলেন রানা৷

২০০৯ সালে হওয়া মুম্বই হামলার অন্যতম এই মাস্টারমাইন্ডকে এনআইএর যে আধিকারিকরা জেরা করছেন, তাঁদেরই একজন জানান, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান ব্যবসায়ী রানা পাকিস্তানের সংবেদনশীল সামরিক এলাকাতেও কাজ করেছিলেন সেই জায়গাগুলির অন্যতম ছিল সিন্ধ, বালুচিস্তান, বাহাওয়ালপুর ও সিয়াচেনবালোত্রা সেক্টর ৷ তাহাউর আরও জানিয়েছে যে মুম্বইয়ে একটি অভিবাসন কেন্দ্র বা ইমিগ্রেশন সেন্টার খোলারও পরিকল্পনা করেছিল সে। মূলত সন্ত্রাসবাদের খরচ টানতেই এই ছক কষেছিল তাহাউর। কিন্তু দিনশেষে তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এমনকি, শুধু মুম্বইয়ের তাজ হোটেলই নয়, ওই দিন আরও কয়েকটি জায়গায় হামলা চালানোরও পরিকল্পনা ছিল তাদের।

এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়,  এই মামলায় এনআইএ এর আগে যে চার্জশিট পেশ করেছিল, সেখানে বেশ কয়েকজন শীর্ষ পাকিস্তানি কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছিল ৷ এনআইএর ডসিয়ার অনুযায়ী, নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন এলইটি এবং হুজির শীর্ষনেতা হাফিজ মুহাম্মদ সইদ ওরফে তাইয়াজি, জাকিউররহমান লাখভি, সাজ্জিদ মাজিদ ওরফে ওয়াসি, ইলিয়াস কাশ্মীরি ও আবদুর রহমান হাশিম সৈয়দ ওরফে মেজর আবদুর রহমান ওরফে পাশার ভূমিকাও উল্লেখ করা হয় ৷ মেজর ইকবাল ওরফে মেজর আলি, মেজর সমীর আলি ওরফে মেজর সমীরের মতো আইএসআইএর আধিকারিকদের সক্রিয় যোগসাজশ ও সহায়তায় এই হামলা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করা হয় এই চার্জশিটেই। সঙ্গে এও জানানো হয়, এরা সকলেই পাকিস্তানের বাসিন্দা৷ এদের প্রত্যেকের ভূমিকা রয়েছে ২৬/১১র মুম্বইয়ের সন্ত্রাসবাদী হামলায়।

পাশাপাশি ২৬/১১ হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী ডেভিড কোলম্যান হেডলি ও রানার বিরুদ্ধে দাখিল করা নথিতে এনআইএ এও জানিয়েছে, উভয় অভিযুক্তই পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্করতইবা ও হরকতউল জিহাদি ইসলামী (হুজি)-র সদস্যদের সঙ্গে একটি ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল ৷ ওই জঙ্গি সংগঠনগুলি যাতে নয়াদিল্লি ও ভারতের অন্যান্য স্থানে সন্ত্রাসবাদী কাজ চালিয়ে যেতে পারে, সেই কারণেই এই দুজনকে য়োগ করা হয়

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানো হয়৷ প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে চলে হামলাকারীদের সঙ্গে ভারতীয় সেনা ও পুলিশের লড়াই৷ এই হামলায় নিহত হন ১৬৬ জন ৷ সেই হামলার প্রায় ১৬ বছর পর অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তাহাউর রানাকে হেফাজতে পেয়েছে এনআইএ ৷ সম্প্রতি দিল্লির একটি আদালত তাহাউর রানার হেফাজতের মেয়াদ ৯ জুলাই পর্যন্ত বর্ধিত করেছে ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − thirteen =