‘জয়ী প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে মামলার ভবিষ্যতের উপর’, নির্বাচন কমিশনকে কড়া বার্তা প্রধান বিচারপতির

পঞ্চায়েত নির্বাচনে কমিশনের ভূমিকা ‘খুব সন্তোষজনক নয়।’ ভোট নিয়ে একটি মামলার প্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের। বুধবার মামলাটি ওঠে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চে। এরপরই আদালতের তরফ থেকে জানানো হয়, কমিশন যাঁদের জয়ী ঘোষণা করেছেন, তাঁদের জয় মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের রায়ের পরেই চূড়ান্ত হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি ২০ জুলাই। এই সময়ের মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ, ব্যালট সহ যাবতীয় নথি সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে বুধবার ডিভিশন বেঞ্চ মামলায় কমিশনের তাদের তরফের কোনও অফিসার হাজির ছিলেন না তাদের বক্তব্য জানানোর জন্য। এদিকে ৬৯৮ বুথে কীসের ভিত্তিতে পুনর্নির্বাচন হল তার ব্যখ্যা দিতে প্রস্তুত নয় কমিশন। আদালত এটা বুঝতে পারছে না, কেন এত সতর্কতার পরেও গোলমাল ঠেকানো গেল না। আদালত আরও বলেন, ‘পুলিশ নাগরিকের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হল কিছু ক্ষেত্রে। রাজ্য যদি তার নাগরিককে নিরাপত্তা না দিতে পারে তাহলে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে কমিশন হলফনামা দিয়ে জানাক। এরপর আদালত বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করবে।’ একইসঙ্গে আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘এর আগ পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে বহু নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তার মধ্যে দুটি নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। বাকিগুলি করা হয়নি। সেক্ষেত্রে ধরেই নেওয়া হচ্ছে সেই নির্দেশগুলির মান্যতা দেবে কমিশন।’ পাশাপাশি ভোটের দিন আদালতের দেওয়া নির্দেশগুলি ঠিকমতো পালন করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখবে আদালত। পাশাপাশি রাজ্যের হিংসা কবলিত এলাকাগুলির ভিডিয়ো ফুটেজ সংরক্ষণ করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিশনকে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২০ জুলাই।

এদিন হাইকোর্টের তরফ থেকে এ নির্দেশও দেওয়া হয় যে, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে অসহযোগিতার যে অভিযোগ উঠেছে, তা আদালত বিশেষভাবে দেখবে। কমিশনকে পুনর্নিবাচন নিয়ে আবার বিবেচনা করতে হবে। যে বুথগুলির কথা মামলায় এসেছে সেগুলি দেখতে হবে। যে ঘটনা ঘটেছে তার দায়িত্ব কমিশনকে নিতে হবে। এই প্রসঙ্গেই আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেরেওয়াল এ প্রশ্নও তোলেন, এমন নির্বাচনের কী দরকার? এই প্রসঙ্গে তিনি এও বলেন, ‘আমাদের ভোট দিতে হবে না। মানুষের প্রাণ বাঁচুক।’ একইসঙ্গে এও জানান, হামলার ঘটনায় পুলিশ সাহায্য করেছে, গণনা কেন্দ্রের ভিতরে তৃণমূলের লোকজন ছাড়া আর কেউ ছিল না। অভিযোগ জানাতে গেলে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠি ফোন ধরেননি বলেও দাবি প্রিয়াঙ্কার। একইসঙ্গে প্রিয়াঙ্কা এ প্রশ্নও তোলেন, নির্বাচন কমিশনার বলেছে কে কোথায় গুলি করবে তার দায়িত্ব নেওয়া যায় না, এটা নির্বাচন কমিশনারের মনোভাব হতে পারে কি না তা নিয়েও। তাঁর অভিযোগ, ব্যালট বক্স নিয়ে কার্যত ফুটবল খেলা হয়েছে।

এদিকে এদিন মামলাকারী শমিক বাগচি পুনর্নিবাচনের দাবি জানান। তিনি উল্লেখ করেন, অশান্তি চলছে একাধিক জায়গায়, বোমাবাজিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্কুলগুলি। এই প্রেক্ষিতেই স্কুলগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আর্জি জানান তিনি। একইসঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশন কী করছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন মামলাকারীর আইনজীবী। তাঁর প্রশ্ন, কেন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। আইনজীবী উল্লেখ করেছেন, ডায়মন্ড হারবারে দুষ্কৃতীরা প্রিসাইডিং অফিসারকে বন্দুক দেখিয়ে বুথ দখল করেছে, খুনের ঘটনা ঘটেছে কোচবিহারে। নির্বাচন কমিশনের ভোট বাতিল করা উচিত বলে মন্তব্য করে আইনজীবী বলেন, অন্তত ৬ হাজার বুথে পুনর্নির্বাচন করা জরুরি।

এদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী উল্লেখ করেন, ৮ জুলাই অর্থাৎ ভোট ঘোষণার সময় থেকেই সমস্যা চলছে। ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আদালতে উল্লেখ করেন তিনি। আইনজীবী এও জানান, শুধু হিংসার ঘটনাই নয়, ব্যালট নষ্ট করার ঘটনা ঘটেছে, এমন অনেক ছবি আছে।

এদিকে গণনা ঘিরে প্রবল অশান্তির অভিযোগ উঠেছে। তিন জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। মঙ্গলবার রাতভর বোমাবাজি চলে ভাঙড়ে। এই পরিস্থিতিতে আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল।

উল্লেখ্য, ৮ তারিখ পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন রাজ্যের বিভিন্ন অংশে হিংসার অভিযোগ সামনে এসেছিল। আহত হয়েছিলেন একাধিক ব্যক্তি। মৃত্যু হয়েছিল ১৮ জনের। যদিও রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা দাবি করেন, ভোটের দিন ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরও জানান, যে সমস্ত জায়গা থেকে অশান্তির অভিযোগ এসেছে সেখানে জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কমিশনের কাজ ব্যবস্থাপনা করা। জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের উপর, এমনটাই জানান তিনি।

এদিকে বিরোধীরা সরব হয়েছিলেন হিংসার অভিযোগ তুলে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়ে হস্তক্ষেপ দাবি করেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। নির্বাচনের পর পরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা যায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − thirteen =