পঞ্চায়েত ভোটে গুলি-বোমা-খুন ! নিহত ১৩   অভিযোগের আঙুল কেন্দ্রীয় বাহিনীর দিকেই

শনিবার সকাল থেকে পঞ্চায়েতনির্বাচন নিয়ে অশান্ত রাজ্য। র্ত ঝরার পাশাপাশি প্রাণও গেল ১৩ জনের। নিহতদের মধ্যে তৃণমূল কর্মী ৯, বিজেপি ১, সিপিআইএম ১, কংগ্রেস ১ এবং ভোটার ১।

এদিকে ভোট গ্রহণ পর্ব শুরু হয়ে যাওয়ার প্রায় ছয় ঘণ্টা অতিক্রম হয়ে গেলেও হুগলিতে বেশ কিছু ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে এখন এসে পৌঁছাতেই পারেনি  আধা সামরিক বাহিনী। ভোটের দিন সকাল ১০ টায় ১২ কোম্পানি আরপিএফ আসে ডানকুনি স্টেশনে। সেখান থেকে দুপুর ১২ টার পরে তারা নিজস্ব সরঞ্জাম গুছিয়ে রওনা দেন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের দিকে। দুপুর ১টা পেরিয়ে গেলে হুগলির জিরাটে গিয়ে পৌঁছায় এক কোম্পানি বাহিনী। ভোট পর্ব শুরু হয়ে যাওয়ার এত পরে বাহিনী পৌঁছানো নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই ৷

এদিকে খবর আসে, হুগলির পান্ডুয়ার গোয়ারায় ভোট কেন্দ্রের বাইরে চরম উত্তেজনা। আগুন জ্বলল বাইকে। আহত বিরোধী দল নেতা থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষ অনেকেই। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, খিতীন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৩,৯৪ বুথে হঠাৎ ২০টি বাইক বাহিনী এসে বুথ দখলের চেষ্টা করে। বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট মারার চেষ্টা করে বহিরাগতরা। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এলাকার বাসিন্দারা। গ্রামবাসীরা তাদের ধাওয়া করলে তারা দুটি বাইক ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর বাইক দুটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় এলাকার বাসিন্দারা।

এদিকে বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের ঘোষপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৭ নম্বর বুথে বিজেপি তৃণমূল সংঘর্ষ।। লুঠপাঠ চলে বুথে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় ব্যালট পেপার। প্রাণভয়ে ভোট কর্মীরা বুথ ছেড়ে পালান। এদিকে পুকুরে ভাসছে ব্যালট পেপার।

এদিকে আরামবাগে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার প্রতিবাদে ব্যালট বাক্সই জলে ফেলে দিলেন বিজেপি সমর্থিত গ্রামবাসীরা। আরামবাগের ধামসা এলাকার ঘটনা। দু-দুটি ব্যালট বাক্স ভাসছে জলে। ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। বিজেপির অভিযোগ ১৪১ নং বুথে ঢুকে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা ছাপ্পা দেয়। আর তার জেরেই শুরু হয় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ। পরে বুথে থাকা দুটি ব্যালট বাক্স তুলে নিয়ে গিয়ে জলে ফেলে দেয় বিজেপি সমর্থিত গ্রামবাসীরা। তাদের অভিযোগ, বুথে নেই কোনও সশস্ত্র বাহিনী। তার জেরেই এই গণ্ডগোল। যদিও তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পরে পুলিশ গিয়ে জল থেকে উদ্ধার করে ব্যালট বক্স।

এদিকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখোর ১ নং ব্লকের ১৪৫ নম্বর বুথও। প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর করে ব্যাপক হারে ছাপ্পা চালায় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনার জেরে অফিসার মহম্মদ খাইরুলকে আহত অবস্থায় ইসলামপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি জানান ওই বুথে ১০২০ ভোটার ছিল তার মধ্যে কত ভোট হয়েছে তা বলা মুশকিল। তিনি জানান, কিছুক্ষণ ভোট চলার পর বেশ কিছু দুষ্কৃতী বুথের ভিতর ঢুকে পড়ে তারপর তারা ব্যালট কেরে নেওয়ার পাশাপাশি ছাপ্পা চালাতে থাকে। সেক্টর অফিসে খবর পাঠালেও কেউ আসেনি। গোয়ালপোখরের চোপড়া বাকারী এলাকায় তৃণমূল কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ উঠল নির্দলদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি গোয়ালপোখরের চোপড়া বাকারী ১৪৫ নম্বর বুথের ঘটনা। সেই বুথে প্রিসাইডিং অফিসারকেও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। আহতরা ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

যখন নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রায় সমাপ্তির পথে তখনই গুলি চলার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ালো মাথাভাঙায়। মাথাভাঙ্গা ১ নং ব্লকের হাজরাহাট ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ছাট পক্ষিহাগা এলাকায় ২/২১২ নং বুথে গুলি চলার ঘটনায় আক্রান্ত হন এক ব্যক্তি। আক্রান্ত ব্যক্তির নাম বিপ্লব সরকার। সূত্রে খবর, গুলি লেগেছে তাঁর হাতে। আপাতত তিনি মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তবে এই সব ঘটনার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর দিকেই আঙুল তুলেছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহাও। স্পষ্ট জানান, ‘সন্ত্রাসে দায়ী কেন্দ্রীয় বাহিনী। সময়মত বাহিনী না আসায় এই অশান্তি ৷’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − two =