খাস কলকাতার বুকে পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী বিরোধী শিবিরের প্রার্থীদের অপহরণের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ চাঞল্যকর এই দাবি তুলে ই এম বাইপাস সংলগ্ন পঞ্চসায়র থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রবীণ সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়৷ অভিযোগ, তিন জন বিজেপি প্রার্থী এবং একজন বাম সমর্থিক নির্দল প্রার্থীকে পঞ্চসায়র এলাকার একটি গেস্ট হাউস থেকে অপহরণ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, পঞ্চসায়র থানা এলাকার পিয়ারলেস হাসপাতালের কাছে একটি গেস্ট হাউসে ছিলেন মথুরাপুর ১ নম্বর ব্লকের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চার প্রার্থী। তাঁদের পরিবারের দাবি, রাত ঠিক ১১ টা ৭ মিনিট থেকে ১১ টা ১৫ মিনিটের মধ্যে ওই ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার কারণেই তাঁরা গেস্ট হাউসে এসেছিলেন। রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর গেস্ট হাউজে কর্মী থেকে আবাসিক সবারই নজরে আসে গেস্ট হাউসের নীচে পরপর বেশ কয়েকটি গাড়ি এসে দাঁড়াতে। গাড়িতে তৃণমূল নেতারা ছিলেন বলে অভিযোগ। গেস্ট হাউসের মালিক বাপ্পা ঘোষ জানান, হঠাৎ গণ্ডগোলের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তাঁর। উঠে তিনি দেখেন তাঁর অতিথিদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন কেউ বা কারা। তিনি জানান, অনেকেই যেতে চাইছিলেন না, জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে তাঁদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল কি না, তা দেখেননি তিনি।
এই প্রসঙ্গে সামনে আসছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের একটা সমীকরণ। দক্ষিণ ২৪ পরগণার মথুরাপুর ব্লকের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৫টি। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস জয় পায় ৪টিতে। সিপিআইএম তিনটি আসন দখল করে। বিজেপি ৬টি ও নির্দল প্রার্থীরা দুটি আসনে জয়ী হন৷ ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকেই বিরোধী প্রার্থীদের নিজেদের দখলে টেনে তৃণমূল কংগ্রেস ওই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ৷ কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, শাসক দলের চাপের মুখেও নতি স্বীকার না করে মঙ্গলবার রাতে পঞ্চশায়র থানা এলাকার একটি গেস্ট হাউসে আশ্রয় নেন কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী শিবিরের জয়ী প্রার্থীরা। এরপরই বৃহস্পতিবার রাতে গেস্ট হাউসে সশস্ত্র অবস্থায় হানা দেয় তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী৷ ভয় দেখিয়ে বিজেপির তিন জয়ী প্রার্থী ও এক বাম সমর্থিত নির্দল জয়ী প্রার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এই খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় সহ সিপিএম নেতারা৷ রাতেই পঞ্চশায়র থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা৷ কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, অপহৃত প্রার্থীদের নিয়ে গিয়ে মথুরাপুর এক নম্বর ব্লকে কর্মতীর্থের গেস্ট হাউসে রাখা হয়েছে। সূত্রে খবর, শুক্রবারই এই জয়ী প্রার্থীরা নিজেদের নিরাপত্তার আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ তার আগেই বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের অপহরণ করা হল৷ যদিও এই ঘটনায় তৃণমূলের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।