আরজি কর কাণ্ডের এক বছর হতে চলেছে আগামী ৯ অগাস্ট। এই ঘটনায় প্রথমে কলকাতা পুলিশ, পরে সিবিআই তদন্ত করেও বিচার মেলেনি। এই দাবিতে আগামী শনিবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে নির্যাতিতার পরিবার। তার আগে শনিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দফতরে গিয়ে অভিযানে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসতে দেখা গেল মৃত তরুণী চিকিৎসকের বাবা–মাকে। তবে এই তালিকায় নেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। তাঁদের আমন্ত্রণ জানাবেন না বলেও জানিয়েছেন নির্যাতিতার পরিবার।
৯ অগাস্টের অভিযানে সামিল হওয়ার অনুরোধ জানাতে নির্যাতিতার বাবা–মাকে দেখা যায় সল্টলেকে বিজেপির দফতরেও যেতে। জানা যাচ্ছে, এর আগে তিলোত্তমার মা–বাবা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে গিয়ে মহম্মদ সেলিম ও পরবর্তীতে বিধান ভবনে গিয়ে কংগ্রেসকে আমন্ত্রণ জানান তাঁরা। তবে কংগ্রেস দলনেতা শুভঙ্কর সরকার তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এরপর শনিবার তাঁরা বিজেপি–র রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন। পরবর্তীতে এসইউসিআই–এর রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্যের সঙ্গেও দেখা করেন। এমনকী সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সঙ্গেও দেখা করেছেন। তবে এই গোটা প্রক্রিয়ায় যেহেতু বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর একটা ভূমিকা রয়েছে, তাই বাকি রাজনৈতিক দলগুলির আদৌ ৯ তারিখের নবান্ন অভিযানে আসে কি না তা নিয়ে একটা ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে নির্যাতিতার বাবা জানান,’ এই অরাজনৈতিক‘ নবান্ন অভিযানে সামিল হওয়ার জন্য সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। সকলেই আসবেন বলে জানিয়েছেন।‘ পাশাপাশি তাঁরা এও জানান, ‘যদি কারও শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিতি নিয়ে কারও সমস্যা থাকলে অন্য কোনও জায়গা থেকে আন্দোলন করতেই পারেন।’
এদিকে বিজেপি মুখপাত্র জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘তাঁদের প্রতি আমাদের পূর্ণ সহমর্মিতা রয়েছে। নাগরিক অধিকার রক্ষায় প্রতিবাদের ডাক সংবিধান আমাদের দিয়েছেন।’ অন্যদিকে এসইউসিআই–এর রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা তাঁদের প্রতি সমব্যথী। এর আগে আমাদের পূর্ণ সমর্থন ছিল ডাক্তাদের আন্দোলনে। বাদ বাকি কিছু কিছু আন্দোলন হচ্ছে যেখান অরাজনৈতিক বলা হলেও তার চরিত্র পরিষ্কার থাকছে না। ডাক্তারদের সমস্ত আন্দোলনে আমরা থাকব কোনও ব্যানার ছাড়া।’
প্রসঙ্গত, গত মাসেই নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাড়িতে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচী। সেইসময়েই শুভেন্দুর পাশে দাঁড়িয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেছিলেন, ‘ন্যায় বিচার পাইনি। প্রতিবাদ জানাতে এবং বিচার ছিনিয়ে নিতে আগামী ৯ অগস্ট নবান্ন অভিযানের ডাক দিচ্ছি।‘
এর পাশাপাশি এও জানা যাচ্ছে, গতবছরের মতোই এবছরও ১৪ অগাস্ট রাত দখলের ডাক দিয়েছে পরিবার। তাঁদের কথায়, ‘কোটি কোটি লোক যেমন গত বছর প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমেছিল। এবছর সেভাবেই পালিত হোক।‘
গত বছর ৯ অগাস্ট আরজি কর হাসপাতালে তরুণী জুনিয়র চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য তথা দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। প্রায় সব হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে যায়। দফায় দফায় আন্দোলনে নামে সব মহল।
প্রসঙ্গত, আরজি করের ঘটনায় পুলিশ তদন্তে চালিয়ে সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করে। এরপর তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। দীর্ঘ কয়েকমাস তদন্ত চালিয়েও আর কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি, এই অভিযোগে সরব হয় জুনিয়র চিকিৎসক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল এবং নির্যাতিতার পরিবার। এদিকে আরজি করকাণ্ডের কয়েকমাসের মধ্যেই শিয়ালদহ আদালত ধৃত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। তবে সঞ্জয় একাধিকবার দাবি করেছে, সে এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নয়। নির্যাতিতার পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছিল, তাঁরা এই তদন্তে সন্তুষ্ট নয়। ধর্ষণ–খুনে কেবল সঞ্জয় একা নয়, আরও অনেকেই জড়িত থাকতে পারেন বলেও আশঙ্কা জানিয়েছিলেন তাঁরা। এবার ৯ অগস্ট নবান্ন অভিযানে সেই দাবিই জানাতে চলেছে নির্যাতিতার পরিবার।