বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে সরব বিরোধীরা। এবার ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে আলোচনায় বসছে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটি। আগামী ১১ নভেম্বর সংসদে কমিটির ওই বৈঠক হবে। এই কমিটিতে শাসক এবং বিরোধী মিলিয়ে মোট ৩১ জন সাংসদ রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটিতে বাংলার ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেতে পারে বলে জল্পনা। এদিকে সংসদীয় কমিটির সদস্য তৃণমূল সাংসদ মালা রায় স্পষ্ট ভাষায হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ওই বৈঠকে শুধু বাংলা নিয়ে আলোচনা হলে তৃণমূল তীব্র প্রতিবাদ জানাবে।
এদিকে সূত্রে খবর, বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ রাধামোহন দাস আগরওয়াল এই কমিটির চেয়ারম্যান। বাকি ৩০ জন সাংসদের মধ্যে ১৩ জন বিজেপি বা এনডিএ জোটের শরিক দলগুলির। কমিটির সদস্য হিসেবে তৃণমূলের তরফে রয়েছেন কলকাতা দক্ষিণের সাংসদ মালা রায়, বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। এ রাজ্য থেকে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য ওই কমিটিতে রয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, যে ১০টি বিষয় নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হওয়ার কথা, তার মধ্যে ৯ নম্বরে রয়েছে ভোট পরবর্তী হিংসার বিষয়টি। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় তৃণমূল সরকার গঠন হয়। তারপর থেকে লাগাতার রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এবং বামেরা নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে অভিযোগে সরব হয়েছে। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী হিংসা, ২০২১ সালের পুরসভা নির্বাচন এবং ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা নিয়ে শাসকদল তৃণমূলকে নিশানা করে বিরোধীরা। একের পর এক ঘটনায় কেন্দ্রের তরফে রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা দেখতে প্রতিনিধি দলও পাঠানো হয়।
এই প্রসঙ্গে বিজেপির তরফে বারবার অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের বহু কর্মী–সমর্থক ঘর ছাড়া। খুন হয়েছেন অনেকে। যা দেখতে কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা রাজ্যে আসেন এবং এরপর বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে রিপোর্টও দেন।
এই প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ভোট পরবর্তী হিংসার বিষয়টি উঠে আসতে চলেছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক শিবিরের উপর ‘চাপ’ তৈরি করতে বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসার প্রসঙ্গ আলোচনায় তুলে আনা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বারবার এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যকে বলা হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার উদাসীন থেকেছে বলে অভিযোগ। সেই কারণেই সংসদীয় কমিটিতে এই বিষয়টি তুলে ধরে তৃণমূলকে চাপে ফেলার চেষ্টা করা হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
এরই প্রেক্ষিতে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে আলোচনায় শুধু বাংলাকে ‘টার্গেট’ করা হলে তাঁরা বিরোধিতা করবেন বলে জানালেন কমিটির সদস্য তৃণমূল সাংসদ মালা রায়। তিনি বলেন, ‘উত্তর প্রদেশ, গুজরাত, বিহারের ভোট পরবর্তী হিংসার সঙ্গে তুলনা করলে বাংলায় কোনও হিংসাই হয়নি। তবে আলোচনা হতেই পারে। আলোচনা হোক আমরা চাই। কিন্তু, একতরফাভাবে শুধু বাংলা নিয়ে আলোচনা হবে, সেটা তো হতে পারে না। এটা আমরা মানব না। বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে এমন সব রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। সেইসব রাজ্যগুলি নিয়ে আলোচনা হোক। তারপর বাংলার প্রসঙ্গ উঠলে আমরা বলব। যেগুলো আমরা করিনি, সেটা যদি বলতে চায়, তখন প্রতিবাদ হবে। শুধু বিরোধীদের আক্রমণ করার জন্য, তাদের হেয় করার জন্য আলোচনা হবে, সেটা মানব না। যথার্থ আলোচনা হলে আমরা স্বাগত জানাব। পরিস্থিতি দেখে তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ প্রয়োজনে বৈঠক বয়কট করে বেরিয়ে আসার কথা বলেন তৃণমূল এই সাংসদ।
সংসদীয় কমিটিতে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘অনুপ্রবেশ, ভোট পরবর্তী হিংসা–সহ নানা ইস্যু নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হবে। সব রাজ্যেরই ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে আলোচনা হবে। তার মধ্যে যে রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পরবর্তী হিংসা হয়েছে, সেই রাজ্য নিয়ে বেশি আলোচনা হবে। এটা পশ্চিমবঙ্গের কমিটি নয়। বয়কট করলে তার সমুচিত জবাব পাবেন।’ কমিটির সদস্য শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি ওই কমিটির সদস্য। সংসদীয় রীতিনীতি মেনে, এই নিয়ে কিছু বলব না।’