রাষ্ট্রপুঞ্জের চাকরি ছেড়ে ভারতে ফেরার পর এতদিন পর্যন্ত তাঁকে ভাড়াটে সৈন্যর ভূমিকাতেই দেখা গিয়েছে। বিপুল অর্থের বিনিময়ে, কখনও নরেন্দ্র মোদি, কখনও ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং, কখনও অরবিন্দ কেজরিওয়াল, আবার কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট কুশলী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। একের পর এক নেতাকে ভোট বৈতরণী পার করিয়েছেন। ২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের পরই আর এই ভূমিকা পালন করবেন না বলে জানিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। এরপর থেকে ‘জন সূরজ যাত্রা’ নামে বিহার জুড়ে এক প্রচারাভিযান শুরু করেন তিনি। অবশেষে, ২ অক্টোবর, মহাত্মা গান্ধির জন্মদিনে এই প্রচারাভিযানকে পুরো দস্তুর রাজনৈতিক দলে পরিণত করতে চলেছেন পিকে। রবিবার (২৮ জুলাই) জন সূরজের পক্ষ থেকে এই কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, ওই দিন রাজনৈতিক দল হিসেবে হিসেবে নিবন্ধিত করা হবে জন সূরজকে।
জন সূরজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিহার জুড়ে তাঁদের প্রচারের সঙ্গে দেড় লক্ষেরও বেশি কর্মকর্তা যুক্ত আছেন। দল গঠনের আগে, তাঁদের নিয়ে আটটি পৃথক রাজ্য-স্তরের বৈঠক করা হবে। এই বৈঠকগুলিতে দলের গঠন প্রক্রিয়া, নেতৃত্ব, গঠনতন্ত্র এবং দলের অগ্রাধিকার এই সব বিষয়ে ওই কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চলতি মাসের শুরুতেই অবশ্য এই প্রচার অভিযানকে রাজনৈতিক দলে পরিণত করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পিকে। তিনি জানিয়েছিলেন, এই প্রচার অভিযান একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক দলে পরিণত হলে প্রায় এক কোটি মানুষ তাঁর সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। রবিবার, পটনায় এক জনসভায় প্রশান্ত কিশোর জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দল হলে জন সূরজকে, জেনারেল, ওবিসি, মুসলিম ইত্যাদি পাঁচ শ্রেণির উপদলে ভাগ করা হবে।
তিনি আরও জানান, প্রতিবার এই পাঁচ শ্রেণির একেকজনকে দলের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেছেন, প্রথমে কে দলের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবে এবং কতদিন পর তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, এই প্রশ্নগুলি এখনও রয়ে গিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, দলের নেতৃত্ব এক বছরের জন্য কোনও নেতার হাতে রাখা উচিত বলে পরামর্শ এসেছে। সেই ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের মধ্যে পাঁচটি বিভাগেরই একজন করে নেতা দলের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাবেন। আরেকটি পরামর্শ আছে, একেকজন নেতাকে দুই বছরের জন্য সুযোগ দেওয়ার। কারণ, এক বছরে কারও পক্ষেই খুব বেশি কাজ করা সম্ভব নয়। এই নিয়ে এখনও আলোচনা বাকি আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শুধু রাজনৈতিক দল গঠন নয়, রাজ্যের রাজনৈতিক দৃশ্যপটই পাল্টাতে চান তিনি। সামনেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। এই ভোটে, বিহারের ২৪৩টি বিধানসভা আসনেই জনসূরজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে ঘোষণা করেছেন পিকে। তিনি বলেছেন, এখনও পর্যন্ত বিহারের রাজনীতিতে তিন দলের আধিপত্য রয়েছে – লালু, নীতীশ এবং বিজেপি। বিহারের বিজেপি এবং আরজেডি-র সঙ্গে নীতিশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জেডি(ইউ)-এর জোট সরকার দেখেছে। এই অবস্থায় বিহারের উন্নতি ঘটাতে গেলে রাজ্যে একটি নতুন দল বা একটি নতুন বিকল্প চাই। গত ৩০ বছর ধরে বিহারের মানুষের জীবনের কোনও উন্নতি ঘটেনি। এই অবস্থায়, জন সূরজ সেই বিকল্প বলে চিত্রিতও করেন তিনি।